Saturday , December 21 2024
Breaking News
Home / Countrywide / নিজের জন্য কাফনের কাপড় কিনে রেখে গিয়েছিলেন মাইক্রোবাস-ট্রেন দূর্ঘটনায় নিথর হওয়া হাসিম

নিজের জন্য কাফনের কাপড় কিনে রেখে গিয়েছিলেন মাইক্রোবাস-ট্রেন দূর্ঘটনায় নিথর হওয়া হাসিম

মাইক্রোবাসের এবং ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় ১১ জন। তার মধ্যে রয়েছে হাসিম নামের এক যুবকও। এই ঘটনা মাত্র এক দিন পরেই তার সাথে ঘটে যাওয়া পূর্বের ঘটনা নিয়ে তুমুল আলোচনা সৃষ্টি হয় । ঘটনা সুত্রে জানা যায়, হাসিমের নানা গুরুতর অসুস্থ থাকায় তিন সপ্তাহ আগে তাকে কাফন কিনতে বলেন তার মা।

মামাতো ভাই কাপনের কাপড় কিনে দিলে হিসাম সেগুলো বাসায় নিয়ে আসে। কাফনের কাপড় ঘরে নিয়ে আসায় স্বজনরা হিসামকে বকাঝকা করে। আর সেই নানার জন্য কেনা কফিনে দাফন করা হয় হিসামকে।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন হিসামের চাচাতো ভাই জরাইছ উদ্দিন। হিসামের অকাল প্রয়াণ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। দুই বছরের বড় হলেও তারা বন্ধুর মতো আচরণ করে। হিসামের পুরো পরিবার দেশের বাইরে থাকায়, জোরাই সব কিছুতে বন্ধুর মতো তার পাশে ছিল।

জরাইছ উদ্দিন বলেন, হিসামের অনেক বাড়ি রাউজানে। নানা কিছুদিন আগে খুব অসুস্থ ছিলেন। মায়ের পরামর্শে তিনি নানার জন্য একটি কাফন কিনে দেন। কিন্তু কাফন বাসায় নিয়ে আসায় সবাই তাকে বকাঝকা করে। কে জানত এই কাফনের মধ্যেই তার মৃত্যু হবে।

২০০৭ সালে হিসামের বাবা মারা যাওয়ার পর তার দেখাশোনা করছিলেন তার চাচা আকবর হোসেন মানিক। তিন বছর আগে হিসামের মা তার মেয়ের জন্য কানাডায় চলে যাওয়ার পর হিসামের পুরো দায়িত্ব পড়ে তার চাচার ওপর। বলেই ভাতিজার পড়ার টেবিলে বসে কাকা কাঁদছিলেন।

চাচা আকবর হোসেন মানিক বলেন, হিসামকে তার মা আমার ওপর ন্যস্ত করেছেন। তারপর থেকে হিশাম সবসময় আমার সাথেই ছিল। মা, ভাই, বোন না থাকলেও তিনি কখনো উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেননি। তিনি সবকিছু গুছিয়ে রেখেছিলেন। এসএসসি পরীক্ষা শেষে হিসামের কানাডা চলে যাওয়ার কথা ছিল। আমি এখন তার মা আর ভাইকে জবাব দেব?

তিনি আরও বলেন, ভাতিজার প্রাইভেট শিক্ষক রাকিবের সঙ্গে ট্যুরে যাওয়ার কথা বললেও আমি বাধা দিতে পারিনি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে কী পোশাক পরতে হবে তাও জিজ্ঞেস করলেন। সকাল দশটার দিকে খেয়াছরা আমাকে ফোন করে। এরপর আর কোনো কথা হয়নি।

হিসামের আরেক চাচা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমি রেলওয়ের গেটম্যানের ফাঁসি চাই। তাকে ফাঁসি দিতে হলে আমাদের সবকিছু বিক্রি করতে হবে, আমরা তা করব। আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণের টাকা লাগবে না। কারণ গেটম্যানের বিচারের জন্য আমরা টাকা খরচ করব।

তিনি আরও বলেন, গতকাল রাতে হিসামের মা কানাডা প্রবাসী জাহেদা বেগমকে খবর দেওয়া হয়। সেখানে সে কাঁদছে, আমরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না হিসামের শ্যালক হাসান মাহমুদ জানান, অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভর্তি হন ক্রিকেট একাডেমিতে। ঢাকা ভাষা ভালো বুঝতে না পারায় ঢাকায় থাকতে চাননি।

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার সময় তার পাশে থাকার কথা ছিল চট্টগ্রামে। কিন্তু পরীক্ষায় না এসে জানাজায় অংশ নিতে আসতে হলো। আমাদের কোনো দাবি নেই, একটাই দাবি গেটম্যানের বিচার।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কেএস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে হিসামকে দাফন করা হয়।

গতকাল শনিবার ৩০ এপ্রিল মাইক্রো বাস ও ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রয়াত হয়েছেন ১১ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৭ জন। এ ঘটনা বিগত দুইদিন ধরে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি করেছে । এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান কে। যার জন্য তাকে আইনের আওতায় নেয় পুলিশ।

About Nasimul Islam

Check Also

চরম উত্তাল, কক্সবাজারের পাশে জন্ম হচ্ছে নতুন দেশ

বাংলাদেশের পাশেই আত্নপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের। যে কোনো সময় নতুন দেশটি আত্মপ্রকাশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *