রংপুর-১ আসন থেকে বিজয়ী এমপি ও জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায় তার ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার পর তাকে ১৫ মিনিটের মতো অবরুদ্ধ করে রাখেন। তিনি এবং তার সাথে বেশ কয়েকজন লোক ভোটকেন্দ্রে ঢোকার পর সেখানকার ভোটার ও আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থকেরা হঠাৎ করে উত্তেজিত হয় এবং এরপর সবাই একত্রিত হয়ে সাংসদ রাঙ্গাকে অবরুদ্ধ করে। গতকাল (রবিবার) গঙ্গাচড়া ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠানে হাজী দেলোয়ার হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যান তিনি সেই সময়ে এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা হাজির হন এবং পরিস্থিতি শান্ত করেন।
ভোটাররা অভিযোগ করেন, মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ কিছুদিন থেকে গঙ্গাচড়ায় অবস্থান করছেন। রোববার দুপুরে তিনি নিজ হাজী দেলোয়ার হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ছেলেমেয়েসহ জাতীয় পার্টির ১০-১৫ জন নেতা নিয়ে প্রবেশ করেন এবং ভোট দেন। স্বচ্ছ ভোটকে প্রভাবিত করা হচ্ছে- অভিযোগ এনে সাধারণ ভোটার ও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ভোটকেন্দ্রের বাইরে হট্টগোল শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ-বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, একজন সাধারণ ভোটার হিসেবে ওই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছি। সঙ্গে আমার ছেলেমেয়েও ছিল। আওয়ামী লীগের কর্মীরা অপপ্রচার চালিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তোলে।
গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম লেবু বলেন, একজন সংসদ সদস্য নির্বাচনকালীন সময়ে তার এলাকায় থাকতে পারেন না। থাকলে তা বিধিবহির্ভূত হয়। তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে লাঙ্গলের পক্ষে রায় নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ভোটের পরে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হলে তার জন্য দায়ী থাকবেন এমপি রাঙ্গাঁ।
গঙ্গাচড়া ও বদরগঞ্জ উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকালে গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের তালপট্টি মাদ্রাসা কেন্দ্রে এক ভোটার তিনটি ব্যালট নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেখানে হট্টগোল তৈরি হয়। এ ঘটনায় প্রায় দুই ঘণ্টা ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্নভাবে কেন্দ্রগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। চতুর্থ ধাপের এ নির্বাচনে গঙ্গাচড়া ও বদরগঞ্জ উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ১০১, সাধারণ সদস্য পদে ৭০৩ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ২৬৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
উল্লেখ্য, মশিউর রহমান রাঙ্গা একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, যিনি রংপুর-১ আসন থেকে বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য। রাঙ্গা একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। তিনি রংপুর-১ আসন থেকে ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলেন কিন্তু তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে ঐ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। রাঙ্গা দলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কারনে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। তিনি “সরকারকে সন্তুষ্ট করার জন্য” কাজ করে দলে আলোচিত হন এবং আকস্মিক পদক্ষেপে তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান, দলের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।