প্রীতম চৌধুরী (২০)। ২০২১ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উত্তীর্ণ হন এবং অনার্স শ্রেণীতে ভর্তি হন। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া একমাত্র ছেলে প্রীতম। পরিবারের সব স্বপ্ন তাকে ঘিরে লালিত। পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে খুব ভালোভাবে পড়াশোনা করছিলেন প্রীতম।
স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে বাবার সঙ্গে সংসার চালানো। কিন্তু প্রীতমকে নিয়ে তার সংসারের স্বপ্ন মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বন্দরনগরীর দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকায় ভবনের লিফটের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বপ্নবাজ তরুণ প্রীতম চৌধুরীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নও চাপা পড়ে।
ওই দিন রাতে প্রীতম নগরের সদরঘাটে ফোর স্টার কমিউনিটি সেন্টার নামক কমিউনিটি সেন্টার থেকে তার বোনের বিয়ের খাবার দিতে গিয়ে ভবনের লিফটের নিচে চাপা পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার (এসি) অতনু চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে প্রীতমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত প্রীতম চৌধুরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভা এলাকার ফটিকা ৫নং ওয়ার্ডের রূহীনি কন্টাক্টর বাড়ির শিমুল চৌধুরীর একমাত্র পুত্র। সে (প্রীতম) উপজেলার নাজিরহাট কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র ছিল। ১৬ অক্টোবর হাটহাজারী সরকারি কলেজে তার ১ম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। তার বাবা একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার নগরীর সদরঘাটে ফোর স্টার কমিউনিটি সেন্টারে প্রীতম মেজ বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। ওই কমিউনিটি সেন্টার থেকে তিনি তার প্রতিবন্ধী খালার খাবার নিয়ে নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ায় আম্বিয়া গ্রিন নামের ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় নিজ বাড়িতে যান। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে খাবার নিয়ে নামার সময় দুর্ঘটনাক্রমে লিফটের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ বিষয়ে এসি কোতোয়ালি অতনু চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ভবনের বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানতে পারি, বেশ কিছুদিন ধরে লিফটটি ঠিকমতো কাজ করছে না। এক তলায় সুইচ টিপলে তা অন্য তলায় নিয়ে যায়। যেহেতু তাড়াহুড়োয় ছিল, মনে হচ্ছে, কমান্ড সঠিকভাবে কাজ করেনি। নিচতলায় পৌঁছানোর আগেই লিফট আটকে যায়। সে খেয়াল না করেই পড়ে যায় এবং দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। বর্তমানে তার পরিবার শোকে কাতর। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
এদিকে তার মৃত্যুর খবর গ্রামের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন গর্ভবতী মা শর্মিলা চৌধুরী ও জন্মদাতা পুত্রশোক।
শুক্রবার দুপুরে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় জমান এলাকাবাসী ও তার বন্ধু-সহপাঠীরা। শুক্রবার সন্ধ্যার আগেই প্রীতমকে সৎকার শেষে পার্শ্ববর্তী শ্মশানে শেষকৃত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার চাচি স্কুল শিক্ষিকা মন্দিরা সেন।