জীবিকার তাগিদে মাত্র ২১ বছর বয়সেই সুদূর সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন কাওসার হোসেন নিলয় নামে এক তরুণ। সেখানে ২ বছর কাজের পর দেশে ফিরে ব্যবসা করার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সৌদি আরবে পাড়ি জমানোর মাত্র ৮ মাসের মাথায় লাশ হতে হলো তাকে।
গত ১০ নভেম্বর সৌদি আরবের আল আলিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন নিলয়। এক মাস তিন দিন পর মঙ্গলবার বিকেলে নিলয়ের মরদেহ বরিশালের বাড়িতে আসে। অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ বাড়ির সামনে আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।
নিহত নিলয় শহরের বেলতলা এলাকার আব্দুল মালেক বেপারীর ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে নিলয় ছিলেন সবার ছোট। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। বড় ভাই বিয়ে করে ঢাকায় সংসার শুরু করেন।
নিলয়ের মা কোহিনূর বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এ বছরের শুরুতে নিলয় আমাকে বলেছিল, মা আমি দেশের বাইরে গিয়ে দুই বছর কাজ করবো। তাহলে আমি ভাঙাচোরা টিনের ঘর ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে পারব। দুই বছর পর দেশে এসে ব্যবসা করব। আমি তার কথায় সাড়া দিই। কিন্তু এটি যে তার মৃত্যু ডেকে আনবে তা বুঝতে পারিনি।’
এরপর গত মে মাসে একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। তিন মাস সেখানে কোনো কাজ পাননি নিলয়। পরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি পান। সেখানে প্রায় চার মাস কাজ করেন। এ সময় তিনি ৬০ হাজার টাকা পাঠান।
তিনি আরও বলেন, “আমি ভিডিও কল করলে সে উত্তর দিয়ে বলত, মা আমি কল দিচ্ছি। এরপর কল দিয়ে কথা বলতো। আমাকে দেখলে তার কান্নায় পেতো। তাই ভিডিও কলে কথা বলতে চাইনি। মোবাইল ফোনে কথা হলে বারবার জিজ্ঞেস করত আমি ঠিকমতো ওষুধ খেয়েছি কিনা। দুই বছরের মধ্যে দেশে ফিরবে বলেও জানায় নিলয়। কিন্তু ছেলে ফিরেছে ঠিকই, তবে লাশ হয়ে।’
এদিকে নিলয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত নভেম্বর ১০ তারিখ এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নিলয়। দীর্ঘ এক মাস পর নিলয়ের লাশ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা।