বাংলাদেশি সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় ‘খল’ অভিনেতা কমল পাটেকার। সিনেমার প্রয়োজনে ‘খারাপ’ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। পর্দায় তার উপস্থিতি যেন ভক্তদের জন্য অসস্থিকর। তার অভিনয় দেখে অনেকেই মনে করে থাকেন, তিনি হয়তো আসলেই এমন। কিন্তু এমন ধারণা বিন্দু মাত্র সত্য নয়। বাস্তব জীবনে তার মতো বন্ধু প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হওয়া সত্যিই ভাগ্যের বিষয়।
আশির দশকে এফডিসিতে নায়ক-নায়িকা দেখতে এসেছিলেন তিনি। এরপর এক সময় নিজেই শিল্পী বনে গেলেন। যদিও এই আগমন খুব সহজ ছিল না। গণ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানান কমল পাটেকার।
কমল পাটেকার বলেন, ‘আমার বাড়ি পুরান ঢাকায়। সেখান থেকে এফডিসির গেটে নায়ক-নায়িকা দেখতে আসতাম। অনেক সময় পুরান ঢাকা থেকে হেঁটে আসতাম। প্রিয় শিল্পীকে এক পলক দেখার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গেটে দাঁড়িয়ে থাকতাম। একদিন প্রডাকশন ম্যানেজার রতন গেটে এসে উপস্থিত সবার কাছে জানতে চাইলেন- তোমরা কি অভিনয় করবা? খুশি মনে সুযোগটি লুফে নিলাম। কারণ এই সুযোগে এফডিসিতে প্রবেশ করতে পারলেই প্রিয় সব নায়ক-নায়িকাকে দেখতে পারব। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে এফডিসির পুরাতন গেট থেকে শুটিংয়ের গাড়িতে উঠে পরলাম। ঢাকার অদূরে ‘ফকির মজনু শাহ’ সিনেমাটির শুটিং চলছিল। এক্সটা শিল্পী হিসেবে কাজ পেলাম। এই সিনেমায় কাজ করে সকাল-দুপুরের খাবার পেয়েছিলাম। তাতেই খুশি! শুটিং শেষ ২০ টাকা পারিশ্রমিকও পেয়েছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরেরদিন আবার শুটিংয়ে ডাকা হয় সকাল ৮টায়। আমি সকাল ৬টায় এসে হাজির। খেয়ে না-খেয়ে, পড়ালেখা বন্ধ করে দিনের পর দিন কাজ করতেও ক্লান্ত লাগেনি। এভাবেই সিনেমার পোকা মাথায় ঢুকে যায়। তারপর চলতে থাকে বিরামহীন একের পর এক চলচ্চিত্রের কাজ। এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার সিনেমায় কাজ করেছি।’
যে কোনো চরিত্রে অদ্বিতীয় কমল।আলাপের এক ফাঁকে কমল জানান, আজকের কমলের পেছনে ভূমিকা ছিল পরিচালক শাহীন সুমনের। তার সিনেমায় সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং সব চরিত্রে কাজের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ল্যাংড়া থেকে শুরু করে হিজরা, বোবা, কুকুরের মতো করে হাঁটা সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেছেন।
প্রয়াত নায়ক মান্না ও সাদেক বাচ্চুও কমলের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। দীর্ঘ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে তার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। কমল যা পেয়েছেন তার পুরোটাই প্রাপ্তি। চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে চিত্রনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে উল্লেখ করে কমল বলেন, ‘আমি দেশের সব পরিচালক ও নায়ক-নায়িকাদের সাথে কাজ করেছি। শাকিবের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা ভালো।বড় বড় শিল্পীদের সাথে কাজ করলে কাজ শেখা যায় এবং কাজের মানও ভালো হয়।শাকিব খান কাজে অনেক হেল্পফুল।’
শাকিব খানের সঙ্গে স্মরণীয় একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘একবার কক্সবাজার শাহীন সুমন ভাইয়ের একটি সিনেমার শুটিংয়ে শাকিব ঝুঁকি নিয়ে দুর্দান্ত একটি শট দিয়েছিলেন। সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। রাতের বেলা সাগরে দৃশ্যটি ধারণ করা চ্যালেঞ্জিং ছিল।এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা।’
এক সময় সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে দম ফেলাম ফুসরত মিলত না। বর্তমানে কাজের সংখ্যা কমে গিয়ে তলানিতে ঠেকেছে। আক্ষেপ করে কমল বলেন, ‘করোনার জন্য দুই বছরের মতো নতুন সিনেমা মুক্তি ও নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। অনেক সহকর্মী এখন আর বেঁচে নেই। তাদেরও মনে পড়ে। তবে ভালো লাগছে ধীরে ধীরে কাজ বাড়ছে।’
১৯৮০ সালে বড় পর্দায় প্রথমবারের মতো পা রেখেই বেশ জনপ্রিয়তা পান কমল পাটেকার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একাধিক ব্যবসায় সফল সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্য রয়েছে- ‘নেতা’, ‘দুই নাম্বার’, ‘নুরজাহান’, ‘তুমি আমার প্রেম’, ইত্যাদি। এই মুহুর্তে আটটি সিনেমার কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে তাকে।