অন্যের স্ত্রীকে যৌ/ন নিপীড়নের কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয় বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের (ডিসি)। পদ হারানো এই কর্মকর্তাকে শাস্তি না দিয়ে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের ২২ ব্যাচের ওই কর্মকর্তার নাম আ ন ম ফয়জুল হক। যিনি সম্প্রতি ৩২১ যুগ্ম-সচিবদের একজন। বর্তমানে সড়ক পরিবহন শাখা, ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগে যুগ্ম প্রধান (সংযুক্ত) হিসেবে কর্মরত। ব্যাচের অন্যান্য কর্মকর্তারা বিষয়টিকে বিব্রতকর মনে করেন কারণ নারী কেলেঙ্কারির মতো ঘটনার পর তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কোনো দোষ না থাকলে কেন তাকে ডিসি পদ থেকে অপসারণ করা হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অন্য কর্মকর্তারা।
এদিকে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেছেন ওই নারীর স্বামী। যার একটি অনুলিপি বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে । এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ফয়জুল হক বলেন, ঘটনা সত্য হলে পদোন্নতি পেতাম না। ওই ব্যক্তি প্রতিনিয়ত আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। এখন পর্যন্ত এসব ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি। তদন্ত হলে আমাকে নোটিশ দেওয়া হতো। মিথ্যা অভিযোগে আমার মানহানি করা হয়েছে। সেই ব্যক্তি সাইকো প্রকৃতির। যা তার স্ত্রী লিখিতভাবে বলেছেন এবং এসব কারণে তাকে তালাক দিয়েছেন। যে নারীকে নিয়ে আমার নামে এসব অভিযোগ তার সঙ্গে জীবনে মাত্র একবারই দেখা হয়েছিল। তার প্রয়োজনে সাহায্য নিতে এসেছিলেন।
এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভুক্তভোগী ওই কর্মকর্তার বিভাগীয় শাস্তি চেয়ে গত মাসে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে আগের ঘটনার উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন- মন্ত্রিসভায় আমার আবেদন প্রত্যাহার করতে ফয়জুল হক আমাকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হ/ত্যার হু/মকি দিয়েছেন। আমি এখনও মৃ/ত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে আছি। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার অপরাধে পরিবার আজ ছিন্নভিন্ন, আমার দুই সন্তান ও আমার জীবন আজ বিপন্ন। আবেদনে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অনেক সময় চাকরি বিধিমালায় উল্লেখিত বিষয়ের বাইরে বিভাগীয় কার্যক্রম করা যায় না। এই ক্ষেত্রে কি ঘটেছে তা জানতে হবে। আর সে সময় এক প্রেক্ষাপটে তাকে ডিসি থেকে অপসারণ করা হয়।
অভিযোগকারী মোঃ ফকরুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ কারণে আমার পরিবার ও সন্তানদের জীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সংসার শেষ, এখন আমরা সেপারেশনে আছি। শাস্তি চেয়ে মন্ত্রিসভায় আবেদন করেছি।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা আ.ন.ম ফয়জুল হক বলেন, এসব অভিযোগকারীর বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লারহাটে। ওই পরিবারের সবাই জামায়াত পরিবারের সদস্য। বিভিন্ন লোক দিয়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মতো একজন কর্মকর্তার পক্ষে এসব করা সম্ভব? আমি সরকারের অর্থমন্ত্রীর পিএস ছিলাম। পদোন্নতির আগেও বোর্ড সদস্যদের কাছে অনেক অভিযোগ করা হয়েছিল। আমি ধরে নিয়েছিলাম আমি পদোন্নতি পাব না। ঈশ্বর সহায়ক ছিল, তার সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে ২২ ব্যাচের অন্য কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব হওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা আমার মতো অনেকের জন্যই বিব্রতকর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, তদন্তে মন্ত্রণালয় কিছু পায়নি, তাই তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্ত বলেছেন, তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয়নি।