রাজধানীতে অপহরণের হাত থেকে বেঁচে গেছেন এক নারী যুগ্ম কমিশনার। নির্যাতনের শিকার মাসুমা খাতুন এনবিআরের যুগ্ম কমিশনার (কর) এর কর অঞ্চল-২ এ কর্মরত। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে র্যাব। এলিট ফোর্স জানিয়েছে, ব্যক্তিগত শৃঙ্খলাজনিত কারণে তার ড্রাইভারকে বরখাস্ত করার পর ভিকটিমকে অপহরণ করা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় এলিট ফোর্স।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নারী যুগ্ম কর কমিশনারকে অপহরণের পর নির্মম নির্যাতনের মামলার প্রধান আসামি মো. মাসুম ওরফে মাসুদসহ তিনজনকে আটক করেছে র্যাব। শুক্রবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর ও রাজধানীর সবুজবাগ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- মোঃ আব্দুল জলিল ওরফে পানু ও মোঃ হাফিজ ওরফে শাহনী।
র্যাব জানায়, গত ১৭ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক নারী যুগ্ম কর কমিশনারকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। অপহরণের ১৮ ঘণ্টা পর গত ১৮ আগস্ট রাজধানীর মাদারটেক এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে তার সাবেক গাড়িচালক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। রাজধানীতে. যার মামলা নং ২০/১৭৩। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত মাসুদ নিহতের গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১ আগস্ট, ভিকটিম তাকে ব্যক্তিগত শৃঙ্খলাজনিত কারণে বরখাস্ত করে। ফলে গ্রেফতার মাসুদের মধ্যে ভুক্তভোগীর প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশের সৃষ্টি হয়। মাসুদ জানান, ভিকটিমের প্রথম স্বামী হারুন অর রশিদ তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার পর তার সাথে যোগাযোগ করে এবং মাসুদকে মোটা অংকের টাকা ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দিয়ে ভিকটিমকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যায়।
মাসুদের বরাত দিয়ে র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী হারুন অর রশিদ তাকে ৭০ হাজার টাকা অগ্রিম দেন এবং কাজ শেষ করে তাকে আর গাড়ি চালাতে হবে না এবং ভালো জীবনযাপনের সব ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন। ১৫ আগস্ট রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় গ্রেপ্তার হওয়া মাসুদ তার সহযোগী হাফিজ, পানু, রাজু, সাব্বির, সাইফুল ও শান্তকে পরিকল্পনার কথা জানায় এবং টাকাগুলো সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়। তারা ভুক্তভোগীকে রাজধানীর বেইলি রোড এলাকা থেকে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রেফতারকৃত হাফিজের সাথে ভিকটিমের বর্তমান চালকের ভালো সম্পর্ক থাকায় সে চালকের কাছ থেকে ভিকটিমের অবস্থান সম্পর্কে মাসুদকে জানায়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ আগস্ট রাত আটটার দিকে তারা রাজধানীর বেইলি রোড এলাকায় অবস্থান করেন। রাত সোয়া ৮টায় রাজধানীর মগবাজার থেকে গাড়িতে করে বেইলি রোড এলাকায় পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশা নিয়ে ভিকটিমের গাড়ি থামায় তারা।
এ সময় ভুক্তভোগীর চালক মোটরসাইকেল ও রিকশা সরানোর জন্য নেমে তাকে মারধর করে এবং মাসুদ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এসময় গ্রেফতারকৃত পানুসহ অন্যান্য সহযোগীরা গাড়িতে উঠে ভিকটিমকে জোরপূর্বক অপহরণ করে হাতিরঝিলের দিকে নিয়ে যায়। অপহরণের বিষয়টি ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীকে জানানো হয়। এরপর ভিকটিমের প্রথম স্বামী তাদের হাতিরঝিলের একটি বাড়ির ঠিকানা দেন এবং সেখানে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে ওই বাড়ির প্রধান ফটক বন্ধ দেখতে পাওয়ায় তারা ভিকটিমকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি চালিয়ে সময় নষ্ট করতে থাকে।
পরে আনুমানিক রাত ১২টায় কাঁচপুর এলাকায় গ্রেফতার মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন এবং তার কাছে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। পরে তাকে নিয়ে অপহরণকারীরা ১৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মাদারটেক এলাকায় যান এবং জুমার নামাজ পর্যন্ত অবস্থান করেন।
এ সময় গ্রেপ্তার মাসুদ নিহতের প্রথম স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জুমার নামাজের পর তাদের সেখানে নিয়ে যেতে বলেন। পরে লাঞ্চের সময় হলে মাসুদ, রাজু ও সাব্বি খাবার আনতে যায় এবং পানু, সাইফুল ও শান্ত গাড়ির বাইরে পাহারা দেয়। এ সময় ভিকটিম ‘বাচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে উদ্ধার করে সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে আটক করে এবং মাসুদ, পানু ও শান্তকে আটক করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে ভিকটিমকে হেফাজতে নিয়ে সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে আটক করে এবং ভিকটিমদের ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
গ্রেফতারকৃত মাসুদ গত ২৫ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন। তিনি বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী যানবাহন চালাতেন। বাস চালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলে তার ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এছাড়া তিনি গাড়ি চুরিসহ এলাকার বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। ওই ঘটনার পর থেকে সে রাজধানীর বাবুবাজার এলাকায় এক বন্ধুর বাড়িতে এবং গাজীপুর শ্রীপুর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখান থেকে তাকে আটক করে র্যাব।