বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিয়ের দাবিতে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে গেলে তাকে বেদম প্রহারও করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বিয়ে না করলে থানার সামনেই আত্মহনন করবে বলে হুমকি দেন ওই নারী। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা হলেন রেজাউল হক, সহকারী পুলিশ সুপার, সিংগাইর সার্কেল, মানিকগঞ্জ।
মানিকগঞ্জ সিংগাইর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন নির্যাতিতা। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হক পলাতক রয়েছে। একটি পোশাক কারখানায় উচ্চপদে কর্মরত ওই নারী সাংবাদিকদের জানান, ৯ মাস আগে একটি ঘটনার জেরে সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের সঙ্গে তার দেখা হয়। এরপর দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের কথা বলার পর বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। মার্চ মাসে রেজাউলের স্ত্রী তাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। রেজাউল তাকে জানান, তার সন্তান বড় হলে তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানকে কানাডায় পাঠাবেন। মাঝে মাঝে ঝগড়া হলেও তাদের মধ্যে মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত রোববার রাতে রেজাউলকে একাধিকবার ফোন করার পর তিনি বারবার ফোন কেটে দেন। এরপর বেলা ১টার দিকে আবারও ফোন করা হলে রেজাউল হকের স্ত্রী ফোন ধরেন।
রেজাউলের স্ত্রী তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরদিন সোমবার সকাল ১০টার দিকে তার স্ত্রী রেজাউলের বাড়িতে গেলে পুলিশ তাকে মারধর করে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়। বিকেলে রেজাউল হক থানায় এসে ওসির কক্ষে ওসি ও তার মায়ের সামনে তাকে বিয়ে করার এবং রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে আসার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি পেয়ে তিনি থানা থেকে বাড়ি চলে যান। রেজাউল হক রাতে তাদের বাড়িতে না এসে স্থানীয় চেয়ারম্যান রিপন দেওয়ান ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামকে পাঠান। তারা এসে তাকে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিটমাট করার প্রস্তাব দেয়। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় চাকরি বাঁচাতে তিনি রেজাউল হকের কাছে লিখিত অভিযোগ নেন। রেজাউল হকের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। চেয়ারম্যান রিপন দেওয়ান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল ইসলামের পক্ষে সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হক তাকে লিখিত চিঠি দেন রেজাউলের বিয়ে হবে আগামী ৮ আগস্ট, বিয়ে না করলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তিনি পুলিশ সুপার মানিকগঞ্জের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। কিন্তু পুলিশ সুপার মিটিংয়ে থাকায় সে বৈঠক হয়নি। এরপর তিনি সিংগাইর থানায় যান এবং পুলিশকে তার মোবাইল ফোন ফেরত দিতে বলেন। এ সময় সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থানায় না থাকায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ তাকে সাহায্য করবে না। তিনি সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হককে বিয়ে করবেন, যদি মাত্র একদিনের জন্য। বিয়ে না করলে থানায় এসে আগুন দিয়ে আত্মহনন করবে। তিনি আরও বলেন, তিনি ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম জানান, সোমবার রাতে সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের সঙ্গে কথা বলে ওই নারীর সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। তবে ওই নারীর সঙ্গে মীমাংসার জন্য বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সময় না দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন ওই নারী। এখন আইনত যা হবে তাই হবে।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খানের কার্যালয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী দেখা করেন। সেখানে তিনি পুলিশ সুপারকে সব ঘটনা খুলে বলেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান সাংবাদিকদের জানান, ওই নারীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন ওই নারী। তাকে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আসামি সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার অফিসিয়াল মোবাইল ফোন বন্ধ। কিন্তু সোমবার তিনি জানান, ওই নারীর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। ভুল বোঝাবুঝির কারণে ওই নারী তার বাড়িতে আসেন। স্ত্রীর সাথে তার একটু ঝামেলা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেলে নির্যাতিতা নারী (৪০) সাংবাদিকদের জানান, ৯ মাস আগে একটি ঘটনার পর তিনি সিঙ্গাইর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল হকের সঙ্গে দেখা করেন। হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর বিয়ের প্রলোভনে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়।