ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে থানায় নির্যাতন, পরে নানা নাটকীয়তার পর ওইদিন হাসপাতালের ইটিটি রুমে ঘটে যাওয়া ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে এডিসি হারুনকে বারডেম হাসপাতালে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত ইটিটি রুমে দেখা যাচ্ছে। মহিলাদের জন্য ইটিটি রুমগুলিতে কোনও পুরুষদের প্রবেশের অনুমতি নেই৷
এদিকে ঘটনার বিষয়ে মুখ খুললেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সানজিদা আফরিন। যিনি রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী।
তিনি ৩১তম বিসিএসের কর্মকর্তা। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ বিভাগে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সানজিদা আফরিন বলেন, আমার স্বামী তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বলেছে, এই দুজনের ভিডিও বানান।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
সানজিদা আফরিন নিপা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছি। 2019 সাল থেকে আমি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছি। গত চার-পাঁচ মাস থেকে সমস্যা বেড়েছে। গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে বুকের ব্যথা একটু বেড়েছে। তাই ডাক্তার দেখানো দরকার ছিল।
নিপা বলেন, বারডেম হাসপাতাল যেহেতু স্যারের (এডিসি হারুন) এখতিয়ারে পড়ে তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পেতে স্যারের সাহায্য চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আমি যখন ডাক্তারকে দেখতে গিয়েছিলাম, তখন ডাক্তার কনফারেন্সে ছিলেন। পরে কনফারেন্সে স্যার (হারুন) স্যার ডক্টর ড. তিনি বললেন দাঁড়াও আমি আসছি। তারপর স্যার এলেন। আসার পর ডাক্তার ম্যানেজ করলেন। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন। রক্ত পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলাম। ইকো টেস্ট এবং ইসিজি করা হয়েছিল। তারপর ইটি এর শেষের দিকে আমি বাইরে একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম। প্রথম যে আওয়াজটা কানে আসে স্যার (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছেন- ‘ভাই, হাত তুললেন কেন? তুমি আমার গায়ে হাত দিতে পারবে না।
সানজিদা বলেন, প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল স্যারের (হারুন) সঙ্গে অন্য কারো সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখলাম আমার স্বামীকে (আজিজুল হক মামুন)। আমি জানি না সে আসলে সেখানে কি করছিল এবং কেন সে সেখানে গিয়েছিল। তাকে মনে হচ্ছিল একেবারেই মনের বাইরে, খুব উত্তেজিত। তার সাথে আরও কিছু ছেলে ছিল, আমি তাদের চিনি না। তারা স্যারকে (এডিসি হারুন) ইটিটি রুমে নিয়ে মারধর করে।
সানজিদা আরও বলেন, এ সময় স্যার তার নিজের নিরাপত্তার জন্য আমি যে রুমের কোণে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে দৌড়ে যান। ইটিটি রুমে এত লোক থাকায় বিশ্রী পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কারণ ইটিটি রুমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমি তখন চিৎকার করছিলাম।
তিনি আরও বলেন, তখন আমার স্বামী তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, এই দুজনের একটি ভিডিও করুন। তারপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করে। আমি আমার স্বামী এবং তার সঙ্গীদের সাথে চ্যাট করি যখন তারা ভিডিওটি করে। এরপর যারা ভিডিও করছেন তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যথা অনুভব করি। আমি চাইনি কেউ আমাকে ওই অবস্থায় ভিডিও করুক। আর আমার স্বামীর সাথে থাকা ছেলেদের কাউকেই চিনতাম না।
সানজিদা আরও বলেন, ওই অবস্থায় আমার স্বামী আমাকে চড় মেরে স্যারকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। তখন বিষয়টি স্যারের কাছে নিরাপদ মনে হয়নি। তারপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। এরপর হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরাও আসেন। ১০-১৫ মিনিট পর ফোর্স এলে তারা চলে যায়।
ঘটনার স্থান ও সময় জানতে চাইলে সানজিদা বলেন, বারডেম হাসপাতালের চতুর্থ তলায় কার্ডিওলজি বিভাগে এ ঘটনা ঘটেছে। ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে। এরপর সাতটার দিকে স্যার (হারুন) আসেন। ডাক্তার আসার পর আমি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলাম।