Saturday , December 28 2024
Breaking News
Home / Countrywide / নাপা খেয়ে প্রয়াত সেই দুই সন্তানের মা জানালেন ঘটনার বিস্তারিত

নাপা খেয়ে প্রয়াত সেই দুই সন্তানের মা জানালেন ঘটনার বিস্তারিত

সম্প্রতি আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে সামান্য ৩০ টাকার একটি নাপা সিরাপ একই পরিবারের দুই সন্তানের প্রান কেড়ে নেওয়ার প্রসঙ্গকে ঘিরে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে সামাজিক গনমাধ্যমে। খুবই দারিদ্রতার সংসার ইসমাইল হোসেন ( Hossain ) ও লিমা বেগমের। ( Lima Begum. ) এই হত দরিদ্র পরিবারে অর্থনৈতিক অভাবের কারনে অসুস্থ দুই সন্তানকে ডাক্তার দেখাতে না পেরে, ৩০ টাকা ধার করে নাপা সিরাপ কিনে খাওয়ান। যার কিছু সময় পরেই কঠিন বাস্তবতার স্বীকার হন এই দরিদ্র দম্পতি। এই পরিনতির জন্য এই দম্পতি সংশ্লিষ্ট চিকিৎককে দায়ি করেছেন। তবে এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা খতিয়ে দেখছেন বলে সামাজিক গনমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন।

 

ইসমাইল হোসেন ( Hossain ) ও লিমা বেগমের প্রথম সন্তান জন্মের ৩ দিন পর প্রয়াত হয়। সেই সন্তান হারানোর বেদনা ভুলতে না ভুলতেই আবারো দুই সন্তান ইয়াসিন খান (৭) ও মোরসালিন খান  (৫) অসুস্থ হয়ে পরে । কিন্তু তারা শেষ রক্ষা পায়নি। একসঙ্গে দুই সন্তানকে হারিয়ে এই দম্পতি এখন প্রায় পাগল।

জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন ( Hossain )। ( Ismail Hossain. ) সিলেটে একটি ইটের ভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। তার স্ত্রী লিমা বেগম আশুগঞ্জের ( Ashuganj ) একটি রাইসমিলে কাজ করেন। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। টাকার অভাবে জ্বরে আক্রান্ত দুই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি তারা। বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে ৩০ টাকায় নাপা সিরাপ এনে খাওয়ান। সিরাপ খাওয়ানোর পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু ইয়াসিন ও মোরসালিন। পরে দুজনেই প্রয়াত হয়।

দুই শিশুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিনেও জ্বর কমছে না। ১০ মার্চ বিকেলে ছোট ছেলে মোরসালিন তার মা লিমা বেগমকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলেন। তখন তার মা তাকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি রাইস মিল থেকে টাকা পেয়ে তাকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। পরে দুই সন্তানের নানী লিলুফা বেগম তার মায়ের কাছ থেকে ৩০ টাকা দিয়ে পাশের রোড মার্কেটের ফার্মেসি থেকে এক বোতল নাপা সিরাপ কেনেন। এরপর ইয়াসিন ও মোরসালিনকে আধা চা চামচ সিরাপ খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরই বাচ্চাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে।

কাঁদতে কাঁদতে দুই সন্তানের জননী লিমা বেগম দেশের জনপ্রিয় এক গনমাধ্যমকে বলেন, “সেদিন  আমার ছেলে বলেছিল,মা, তুমি কি আমাকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারো না? আমি তখন বললাম, আমি এখন ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারব না, আমার কাছে এখন টাকা নেই। আপাতত একটা নাপা সিরাপ এনে আমার দুই সন্তানকে খাওয়াই। সিরাপ খাওয়ানোর ১৫-২০ ( ১৫-২০ ) মিনিট পর, দুজনের মুখ থেকে ফেনা বের হতে থাকে। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে অক্সিজেন দিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।

লিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে জানান, তার ছেলেরা সম্পূর্ণ সুস্থ। বাসায় নিয়ে বেশি করে পানি পান করুন। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে আমার এক ছেলে প্রয়াত হয়। বাড়িতে আরও একজনের প্রয়াত হয়েছে। তিনি রেগে বললেন, তখন ডাক্তাররা কী দেখলেন? কেন তারা আমার ছেলেদের একটু চিকিৎসা দিল না? এদিকে দুর্গাপুর গ্রামের রাস্তার বাজারে ফার্মেসির মালিক মোঃ মঈন উদ্দিন। ( Md. Moin Uddin. ) রোববার বিকেলে ( Sunday afternoon ) তারা দুর্গাপুরের তাজপুর ( Tajpur Durgapur ) গ্রামে মঈন উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের কোনো সদস্যকে দেখতে পাননি। ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে ড্রাগ লাইসেন্স পাওয়ার পাশাপাশি, ফার্মাসি পরিচালনা করার জন্য একজন ফার্মাসিস্টকে ন্যূনতম সি-গ্রেড ফার্মাসিস্ট কোর্স নিতে হবে। তবে এগুলো ঐ ফার্মেসিতে ছিল কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

এ প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হোসেন ( Hossain ) মো. ইমরান বলেন, আশুগঞ্জ উপজেলায় ‘মা ফার্মেসি’ নামে ১৭টি লাইসেন্স রয়েছে। দুর্গাপুরের মায়ের ফার্মেসির লাইসেন্স আছে কি না তা এখন স্পষ্ট নয়। কারণ আমরা মালিককে খুঁজে পাইনি। সে কারণে তার কাছে কোনো কাগজপত্র আছে কিনা তা আমি যাচাই করতে পারছি না। পদ ছাড়ার পর তিনি কী করবেন তা এই মুহূর্তে জানা যায়নি। তাকে না পাওয়া পর্যন্ত তার ফার্মেসির বৈধতা সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

বর্তমানে দুর্গাপুর গ্রামের রাস্তার বাজারে ৯টি ফার্মেসি রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩টি ফার্মেসি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ওষুধ অর্ডার করে। বাকিরা কিশোরগঞ্জের ভৈরব ( Bhairab Kishoreganj ) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাইকারি ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কেনেন বলে জানা গেছে। আশুগঞ্জ উপজেলার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ইনচার্জ সিনিয়র মেডিকেল  প্রমোশন এক্সিকিউটিভ মোজাম্মেল হক ( Mozammel Haque ) বলেন, সব ফার্মেসি নিয়ে আমাদের ব্যবসা নেই। এই মা ফার্মেসিও আমাদের কাছ থেকে ওষুধ নেয় না। মাত্র ৩টি ফার্মেসি আমাদের কাছ থেকে ওষুধ নেয়।

এদিকে ওষুধ প্রশাসনের তদন্ত দল রোববার দুপুরে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে মোরসালিন ও ইয়াছিনের মা, বাবা, দাদি ও চাচার জবানবন্দি নেয়। পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আকিব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সিরাপটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। একই ওষুধের অন্যান্য ব্যাচ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, শিশুর স্বজনরা জানিয়েছেন, ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ওষুধটিতে কী কী উপাদান রয়েছে – যা খাওয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে প্রতিক্রিয়া করেছিল – এটি আসলে একটি রহস্য। এই রহস্য উদঘাটনে সময় লাগতে পারে।

এদিকে রোববার সন্ধ্যা ৭টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল ও আশুগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামে আসেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মহিউদ্দিনকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন ও ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রফিক-উস-ছলেহীন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ডা. তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মহিউদ্দিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি

উল্লেখ্য, নাপা সিরাপ সংক্রান্ত পর পর একই সংসারে দুই সন্তানের প্রয়াতের ব্যাপারটি রীতিমত সবাইকে অবাক করে তুলেছে। বাচ্চা দুটির এই প্রয়াতের কারন উদঘাটনের ব্যাপারে সোচ্চার সংশ্লিষ্টরা। কি কারনে বা কেন শিশুদের এই পরিনতি, শুধু নাপাই কি এর পেছনে দায়ী, কি ছিলো এই নাপা সিরাপের ভিতরে এমন অনেক প্রশ্নের জবাব খুজতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চিকিৎসা বিভাগ। এই তদন্তের প্রতিবেদন ডা. মহিউদ্দিনকে আগামী তিন কর্মদিবসের ভিতরে জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান সামাজিক গনমাধ্যম কর্মীদের।

 

 

 

 

 

About Syful Islam

Check Also

খেজুরের রস পান করতে এসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, গ্রেফতার ১৫

নেত্রকোনা থেকে খেজুরের রস খেতে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া আসা ১৫ যুবক ‘জয় বাংলা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়ায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *