নতুন সূর্যোদয় দেখবে বাংলাদেশ, লন্ডনে সভায় শেখ হাসিনা

হাসিনার বক্তৃতার মাঝেই ইউনুসের ফাঁসির দাবি জানালেন উপস্থিত জনতা। বিজয়ের মাসে ‘৭১-এর শহিদদের স্মরণ করলেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী।

ফ্যাসিবাদী, গণহত্যাকারী ইউনুসের বিচার হবে। আজকের অন্ধকার কেটে নতুন সূর্যোদয় দেখবে বাংলাদেশ।রবিবার লন্ডনের মিলনার রোডে আওয়ামী লীগের আয়োজিত একটি বিশেষ সমাবেশে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় তিনি দেশের মানুষের প্রতি তার অটুট বিশ্বাসের কথা জানান।

সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশকে গরিব দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ। আমার অপরাধ, আমি সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। কিন্তু অন্ধকারের এই সময় শেষ হবে, নতুন সূর্য উঠবে বাংলাদেশে।” বক্তৃতার সময় উপস্থিত জনতা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তোলেন এবং ফ্যাসিবাদী ও গণহত্যাকারী হিসেবে আখ্যা দিয়ে ড. ইউনুসের বিচারের দাবি জানান।

শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকারের আমলে অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “জঙ্গি, দুষ্কৃতী, অপরাধীদের মুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা হচ্ছে এই সরকারও তাদের মতোই অপরাধী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩০ হাজার মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের বিচার করেছি বলে আজ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।”

১৯৭১ সালের শহিদদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিয়েছিলেন, তাদের আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। আজ ঘরে ঘরে লুটপাট চলছে, মানুষ বিচার পাচ্ছে না। কিন্তু আমি আশাবাদী, অপরাধীদের বিচার একদিন হবেই।”

সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ‘ইউনুসের ফাঁসি চাই’ এবং ‘শেখ হাসিনা সরকার, বার বার দরকার’ স্লোগান দেন। নেতাকর্মীরা দাবি করেন, শেখ হাসিনা এখনও দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত নেতা।

শেখ হাসিনা তার বক্তৃতার মাধ্যমে পরিষ্কার বার্তা দেন যে, তিনি মানুষের উন্নয়ন ও মুক্তির জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। “গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড ইউনুস ও তার সহযোগীদের বিচার হবেই,”—বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।


ভারতীয় মিডিয়ার চাপে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছিলেন নড়াইলের সেই আলোচিত হিন্দু নারী

ভারতের মিডিয়ায় দেওয়া বক্তব্য নিয়ে নড়াইলের খুকুরানী বিশ্বাস এখন সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ভারতীয় সাংবাদিকদের চাপে বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা বক্তব্য দেওয়ার কথা স্বীকার করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

খুকুরানী বিশ্বাস সম্প্রতি নিজের ভাইয়ের ছেলের বিয়েতে অংশ নিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ যান। ২ ডিসেম্বর নড়াইল থেকে দোগাছিয়া হয়ে মায়াপুর যাওয়ার পথে পেট্রাপোল সীমান্তে ইসকনের একটি বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে ভারতীয় কিছু মিডিয়ার চাপে তিনি বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের কথা বলেন এবং ভারতের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

তার বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, নড়াইলের হিন্দুরা ভয়ে দেশ ছাড়ছে এবং মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়া পূজা-অর্চনায় বাধার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এই বক্তব্য দ্রুত ভাইরাল হয়ে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে, যা তার পরিবার ও এলাকাবাসীর জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।

খুকুরানীর স্বামী অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, তারা কখনও এমন কোনো চাপ অনুভব করেননি। বরং মুসলিম প্রতিবেশীরা সবসময় তাদের পাশে থেকেছেন। খুকুরানীর ছেলে অমলেন্দু বিশ্বাস বলেন, তার মা মিডিয়ার চাপে এই মন্তব্য করেছেন। তিনি মা ও পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

ভিডিও কলের মাধ্যমে খুকুরানী নিজেও জানান, ভারতের সাংবাদিকরা তাকে মিথ্যা বক্তব্য দিতে চাপ দিয়েছিল। তারা তার গলায় ইসকনের মালা দেখে এই ধরণের মন্তব্য করতে উৎসাহিত করে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীও দাবি করেছেন যে নড়াইল বা মাইজপাড়া এলাকায় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে কখনও এই ধরনের সমস্যা হয়নি।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের নড়াইল জেলা সভাপতি কল্যাণ মুখার্জী বলেন, “এই ধরণের বক্তব্য সম্প্রীতি নষ্ট করে। তবে এটা চাপে বলানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই।”

খুকুরানীর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।