আসিফ মাহমুদ অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক,নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকারের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা, সমন্বয়ক সারজিস আলম, সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা ও সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা কমিটিতেও দুজন সমন্বয়কারী রয়েছেন। এদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় রাজনীতির মাঠে হঠাৎ করেই বিএনপিকে বেশ উদ্যমী দেখা যাচ্ছে।
এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে কী ভাবছেন সমন্বয়কারীরা? গত ৮ আগস্ট বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জনগণ যদি মনে করে তরুণরাই রাষ্ট্রের হাল ধরবে তবে জনগণের সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য তরুণরা প্রস্তুত আছে।’
পরদিন দুপুরে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সরজিস আলম নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের উপদেষ্টা হওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারে থাকার কারণে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। এরপর থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
‘তাহলে কি এবার রাজনীতির মাঠেও দেখা যাবে সমন্বয়কদের’- এমন প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যমকে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘মানুষ ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দল তরুণদের নেতৃত্বে দেখতে চায়, যারা সৎভাবে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে বাংলাদেশে সুন্দর সমাজ গঠন করবে। বাংলাদেশের মানুষের চাওয়ার সে জায়গা থেকে আমাদের মনে হচ্ছে, জাতীয় পর্যায়ে আমরা একটি রাজনৈতিক চিন্তাধারায় যেতে পারি।’ সরকার পতনের পর দল গঠনের বিষয়ে প্রথম ভাবনা আসে বলে জানান তিনি। তবে পুরো বিষয়টিই এখনো আলোচনার পর্যায়ে থাকায় কবে, কীভাবে এবং কোন কাঠামোতে দল গঠন হবে কিংবা কারা দলের নেতৃত্বে থাকবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি এই সমন্বয়ক। এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রয়োজন ‘ফুরিয়ে এসেছে’ বলেই মত আরেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার। ১০ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।
সেখানে তিনি লেখেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম। আমাদের নেতৃত্বদের মধ্যে ৬ জুলাই এর দিকেই এই প্ল্যাটফর্মকেন্দ্রীক একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়ে যায়। সেটা ছিল, এই আন্দোলনের মঞ্চ থেকে পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংগঠন হবে না। এই আন্দোলনের মঞ্চকে রাজনৈতিক কাঠামোতে পরিণত করলে আমাদের গণঅভ্যুত্থান তার আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত হবে।’ ‘অনেক সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ভাবখানা এমন যেন তারা একটা কিছু! ছাত্র-জনতা একেকটা অবজেক্ট! নতুন স্বৈরাচার গজানোর আগেই ছাত্র-জনতার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নয়তো এই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামক আমাদের আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তে গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারে পরিণত হবে এবং দ্রুত মানুষের আস্থা হারাবে। আমাদের বুঝতে হবে, কোথায় আমাদের থামতে হবে।’
তাহলে কি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সমন্বয়কারীরা? দল গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্তই বা কীভাবে নেওয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে সমন্বয়ক সরজিস আলম বলেন, সব সমন্বয়কদের নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। সবার সিদ্ধান্তের আলোকে আমরা এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামোতে যাব বলে ভাবছি। সবাইকে একসঙ্গে রেখে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেব।’ এদিকে রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা চললেও রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে শুধু রাষ্ট্রের চাহিদা ও জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে দল গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘যতদিন বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে কাজ করার সুযোগ থাকবে, ততদিন আমরা সেই জায়গায় কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব।কিন্তু যখনই ছাত্র-নাগরিকদের চাহিদা তৈরি হবে যে পলিসি মেকিংয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়দের অংশ নেওয়া দেখতে চাই এবং সেটা নতুন ধরনের কোনো রাজনৈতিক এপ্রোচের মধ্য দিয়ে তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা রয়েছে তারা ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আমরা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দল করব কি না তা সময়কালীন সিদ্ধান্ত। আমরা আশা করি যে সবকিছু স্থিতিশীল হয়ে গেলে, আমরা আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে তা নির্ধারণ করতে সক্ষম হব।