সন্তানদের নিয়ে বাবা-মা অনেক স্বপ্ন দেখেন। তবে অনেক বাবা-মার সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না। আবার অনেক বাবা-মা সন্তানদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেন তার চেয়েও সন্তান অনেক বড় ভালো খবর নিয়ে আসে। তেমনি এক মিস্ত্রি-বাবার ছেলে সবাইকে অবাক করে বড় চাকরি পেলেন। ছেলের চাকরির খবর শুনে বাবা আনন্দে কেঁদে দিলেন। আর এই ছেলের নতুন চাকরির বেতনের কথা শুনে তার নিজ এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। নতুন চাকরিতে মাসে ১৪ লক্ষ টাকা করে বেতন পাবেন এমন সংবাদ দ্রত তাদের এলাকায় ছড়িয়ে পরে।
১৪ লক্ষ টাকা! ছেলের মুখে তার নতুন চাকরির বেতনের কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি বাবা। কিছুক্ষণ কোনও কথা বলতে পারেননি তিনি।
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন ছেলের মুখের দিকে।ভেজা চোখে ফের জিজ্ঞেস করেন, ‘কত?’ ছে’লে বাবাকে জানায়, ‘এক কোটি দুলাখ।’
এবার ছেলে বাত্সল্যকে বুকে জড়িয়ে ধরেন বাবা চন্দ্রকান্ত সিং চৌহান। ভারতের বিহারের খাগারিয়ার চন্দ্রকান্ত সিং পেশায় ঝালাই মিস্ত্রি।আর ছে’লে বাত্সল্য সম্প্রতি মাইক্রোসফটে চাকরি পেয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে ভারতের খড়্গপুরেই ক্যাম্পাসিং হয়। তার পরে পাঁচ দফার পরীক্ষা শেষে তাকে মনোনীত করে বিশ্বের অন্যতম তথ্যপ্রযু’ক্তি ওই সংস্থা।
আইআইটি খড়্গপুরের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ২১ বছরের বাত্সল্য জানিয়েছেন, মাইক্রোসফটের পরীক্ষা মোটেও সহজ ছিল না। পাঁচ ধাপ পেরোনোর পর তাকে যখন নিশ্চিত করেন মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ,
প্রথমে তিনি বিশ্বা’স করতে পারেননি। ঠিক যেমনটা অবাক হয়েছেন তার বাবাও।বাত্সল্যের কথায়, ‘ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে বাবার আমাকে পড়ানোটা সার্থক হলো।’
ছোটবেলা থেকেই বাত্সল্য পড়াশোনায় বেশ ভাল। বিহার বোর্ডের অধীনে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন তিনি। মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করার কারণে সরকারি বৃত্তিও মিলেছিল। মূলত বৃত্তি-নির্ভরই ছিলো তার পড়াশোনা।
তবে, এ সবের বাইরেও পড়াশোনার ক্ষেত্রে যখন যে রকম টাকা-পয়সা প্রয়োজন পড়েছে, চন্দ্রকান্ত তা বিভিন্ন ভাবে জোগাড় করেছেন। ছেলেকে বুঝতেও দেননি। তার কথায়,
‘বাবা সব সময় বলে, জীবনে উন্নতি করতে হবে। তবে, মাধ্যমিকের সময়ে আমি জানতামও না আইআইটি-টা ঠিক কী!২০০৯-এ আইআইটি এন্ট্রান্স দিয়েছিলেন বাত্সল্য। কিন্তু,
ফল ভীষণ খা’রা’প হয়। এরপর লোন করে ছে’লেকে রাজস্থানের কোটায় একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেন চন্দ্রকান্ত। তারপর খড়্গপুর আইআইটিতে পড়াশোনা।
চন্দ্রকান্তের কথায়, ‘জানেন, কোটা থেকে ছেলের বাড়িতে আসার ট্রেনের টিকিটের টাকা’টা শুধু জোগাতে পারতাম। ওখানে ওর থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কোচিং সেন্টারের তিন শিক্ষক করে দিয়েছিলেন।
আমরা কোটায় গেলে যে সমস্ত খাবার ওরা আমাদের খাওয়াতেন, তা কোনও দিন বাড়িতে খাইনি। আসলে ওরা প্রথমেই বাত্সল্যের প্রতিভাটা বুঝতে পেরেছিলেন।’বাত্সল্য ছাড়াও আরও পাঁচ সন্তান রয়েছে চন্দ্রকান্তের।
তাদের কেউই এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়। সকলেই পড়াশোনা করছে। ঝালাই মিস্ত্রি বাবা তাদেরকেও বাত্সল্যের জায়গায় পৌঁছে দিতে বদ্ধ পরিকর।
উল্লেখ্য, এই মিস্ত্রি-বাবার ছেলে অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করেছেন। এমনকি একটা সময় তাদের ঘরে খাবারের সংকট দেখা দেয়। তবে এরপরও থেমে থাকেনি ছেলে। তার পড়াশুনার জন্য মিস্ত্রি-বাবা অনেক ভাবে চেষ্টা করেছেন। আর এই কষ্টের ফল এতো ভালো হবে তা কখনো তিনি ভেবে দেখেননি। বর্তমানে এই ছেলে কে নিয়ে তার নিজ এলাকার মানুষরা গর্ব করছেন। অনেক বাবা-মা এখন স্বপ্ন দেখছেন যে তাদের সন্তানরাও যেন এই ছেলের মত প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।