জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বিএনপির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠন, বর্তমানে তাদের অতীতের সুনাম, ঐতিহ্য ও গৌরব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছে। গত ১৬ বছর ধরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন, যা তাদের সংগঠনকে দুর্বল করে দিয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়েছে। তবে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রদল বন্যাকবলিত এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করে আবারও আলোচনায় এসেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ছাত্রদল। তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে নতুন শিক্ষার্থীদের সংগঠনে যুক্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। নেতারা জানিয়েছেন, তাদের এই উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। ছাত্রদল তাদের কার্যক্রমকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সাম্যের ধারণার ভিত্তিতে পরিচালনা করতে চায় এবং শিগগিরই ‘নতুন ধারার’ ছাত্র রাজনীতির রোডম্যাপ প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেছেন, “ছাত্রদল দেশের সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন এবং এটি মেধাবীদের সংগঠন।” তিনি জানান, নিয়মিত ছাত্রদের দ্বারা ছাত্রদলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সারা দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন ছাত্রদলের নেতারা। তাদের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা সমর্থন জানাচ্ছে এবং ছাত্রদলের পজিটিভ ধারার রাজনীতিতে তারা আকৃষ্ট হচ্ছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে যৌথ কর্মিসভা শুরু করেছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশালে দশ দিনের কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলা ও বিভাগেও এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও ছাত্র রাজনীতির বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। তারা শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে ক্যাম্পাসে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতির প্রসার ঘটাতে চান।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন থেকেই ছাত্রদল একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করে আসছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতির স্লোগান ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি সংকুচিত হয়ে পড়েছে, ফলে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী রাজনীতির প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ছাত্রদল বর্তমানে কাজ করছে।
ছাত্রদলের নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাবেন। নিয়মিত ছাত্রদের গুরুত্ব দিয়ে তাদের নেতৃত্ব তৈরি করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে, তাদের অধিকার রক্ষায় একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে, যা ক্যাম্পাসের একাডেমিক পরিবেশ এবং সংগঠনের বাকস্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেবে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা উল্লেখ করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। তারা এ সমস্যার সমাধানে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করবে এবং কর্মমুখী শিক্ষাপদ্ধতি প্রণয়নের বিষয়ে আলোচনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপদ্ধতির মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানিয়েছেন, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজনীতির সংস্কার শুরু করতে চান। ছাত্রলীগের শাসনাধিকার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। শিক্ষাঙ্গনে র্যাগিং ও হল দখলের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে একটি নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে তারা সচেষ্ট আছেন।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গতানুগতিক ছাত্র রাজনীতির অবসান ঘটানোর লক্ষ্য তাদের। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি মেধাভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নির্মাণ করতে চান তারা, যাতে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
সংক্ষেপে, ছাত্রদল বর্তমানে তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট। তাদের লক্ষ্য হলো সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতির বিকাশ ঘটানো, যাতে আগামী দিনের নেতারা প্রকৃত অর্থে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন।