বর্তমান সময়ে বিশ্ব জুড়ে বৈশ্বিক মহামারি দেখা দিয়েছে। এই মাহামারির প্রকপে বিশ্ব জুড়ে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের সংকট। অর্থনৈতিক সংটক এর মধ্যে অর্ন্তভূক্ত। অর্ন্তজাতিক পরিবহন বাজারেও বৃদ্ধি পেয়েছে খরচের পরিমান। এরই সূত্র ধরে নানা ধরনের পন্যেরও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি এই প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করলো জাতিসংঘ।
চলমান মহামারিতে বিশ্বের অর্থনীতিতে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে নতুন সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে জাহাজের ভাড়া। জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পণ্য পরিবহনে ক্রমবর্ধমান এই জাহাজ ভাড়ার কারণে কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইউএনসিটিএডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কনটেইনার শিপিংয়ের ক্রমবর্ধমান খরচের কারণে বিশ্বব্যাপী ভোগ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। গত ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে কন্টেইনার বহনকারী জাহাজের ভাড়া আকাশচুম্বী। চলমান মহামারির কারণে সাপ্লাই চেইন এবং বিভিন্ন বন্দরে পরিবহন সংকটের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এরই মধ্যে সাত বারের বেশি বিভিন্ন রুটে খরচ বেড়েছে।
ইউএনসিটিএডির বিশ্লেষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, যেভাবে কন্টেইনারের খরচ বাড়ছে তা যদি স্থায়ী হয় তবে বিশ্বব্যাপী পণ্য আমদানি খরচ ১১ শতাংশ বাড়বে এবং ভোগ্যপণ্যের মূল্য ২০২৩ সালের মধ্যে দেড় শতাংশ বাড়বে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বাড়বে ১ দশমিক ২ শতাংশ, চীনে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। ওই বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আমদানির উপর বেশি নির্ভরশীল ছোট দেশগুলোর ভোগ্য পণ্যের দাম সবচেয়ে বাড়বে। এই হার সাড়ে ৭ শতাংশের মতো বাড়তে পারে। ইলেক্ট্রনিক্স, আসবাবপত্র এবং পোশাকের দাম সবচেয়ে বাড়বে। সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এসব পণ্যের দাম কমপক্ষে ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। কার্গো জাহাজের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু কোম্পানি ছোট পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিমানের দিকে ঝুকতে শুরু করেছেন। তবে বিমানের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন আরও ব্যয়বহুল। তবে এক্ষেত্রে খরচ বেশি হলেও সময় বেঁচে যায়।
বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান জাহাজভাড়া অর্থনীতির গতি রোধ করছে। ভবিষ্যতে এই সংকট আরও প্রকট হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি কন্টেইনার খরচ ১০ শতাংশ বাড়ে এবং একই সঙ্গে সাপ্লাইন চেইন ব্যহত হয় তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে শিল্প উৎপাদন এক শতাংশের বেশি হ্রাস পাবে। চীনের ক্ষেত্রে এই হার হবে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। গত অক্টোবরের শেষ দিকে কন্টেইনার বহনকারী ৬ শতাধিক জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে আ/ট/কা পড়ে। করোনা মহামারি এবং বিশ্বব্যাপী কন্টেইনার সংকট, খরচ বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন পণ্য সময় মতো নির্ধারিত স্থানে পৌঁছাতে পারছে না। এর ফলে পণ্যের দাম কয়েক গুণ বাড়ছে। ৪০ ফুটের একটি কন্টেইনারের ক্ষেত্রে আগে যেখানে মাত্র ১৩শ ডলার খরচ করতে হতো এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ডলার। অর্থাৎ ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড।
বিশ্ব জুড়ে নানা ধরনের বিধি-নিষেধ থাকায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে পন্য আমদানি-রফ্তানিতে নানা বাঁধা দেখা দিয়েছে। এবং খরচের পরিমানও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই একটি খাতের সূত্র ধরে পন্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী এই দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এই সংস্থা টি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর নানা ধরনের প্রতিবেদন করে থাকে।