বাংলাদেশের নড়াইল জেলায় কলেজ শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ার পর এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার কয়েকদিন পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাশ// কতা ও হয়রানির অভিযোগে মামলা দায়ের করে স্থানীয় পুলিশ।
নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করার পরদিন শান্তি প্রতিষ্ঠা’র লক্ষ্যে কলেজটিতে একটি বৈঠক হয়। এতে অধ্যক্ষকে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিলেন কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অচিন কুমার চক্রবর্তী। এখন তিনি বলছেন, ফুলের মালা দিয়ে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে কলেজে ফিরিয়ে আনা হবে। বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন ব্যক্তি দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে জানান, এতে নড়াইল-১ (কালিয়া-সদরের একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য বি এম কবিরুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও ক্রাইম) রিয়াজুল ইসলাম, সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা। বৈঠকে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবি করা হয়। তখন কেউ কেউ বলছিলেন, কলেজের শিক্ষক ও স্থানীয় বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি (ঘটনার পরে বহিষ্কৃত) আকতার হোসেনকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে হবে। এ সময় উপস্থিত অচিন কুমার চক্রবর্তী বক্তব্যে বলেন, তিনি কথা দিচ্ছেন স্বপন কুমার বিশ্বাস আর দায়িত্বে থাকবেন না।
১৮ বছর ধরে ওই কলেজে অধ্যক্ষের পদ ফাঁকা। অধ্যক্ষের পদে নিয়োগ পেতে কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা আছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করার ক্ষেত্রে এর যোগসূত্র রয়েছে। এস এম ছায়েদুর রহমান, নড়াইল জেলা শিক্ষা অফিসার জানতে চাইলে অচিন কুমার চক্রবর্তী সেই বৈঠকে কেউ কেউ আকতার হোসেনকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে বলেছিলেন। ওই দিনের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বলেছিলাম, স্বপন কুমার বিশ্বাস দায়িত্বে নেই। তবে আকতার হোসেন দায়িত্ব পাবেন না। তিনি আরও বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার পর কলেজ খুলবে। স্বপন কুমার বিশ্বাসই ফুলের মালা গলায় নিয়ে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসবেন। এদিকে কয়েকটি সূত্র জানায়, সেদিনের বৈঠকের পর আকতার হোসেন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে প্রচার করেন তাঁকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্যের সূত্র ধরে কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদও ছাপা হয়। আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এমন প্রচার আমি করিনি। আমি অধ্যক্ষ হতে চাই না।
আকতার হোসেন ওই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তাঁকে বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে গত বৃহস্পতিবার অব্যাহতি দেওয়া হয়। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নড়াইল জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ বছর ধরে ওই কলেজে অধ্যক্ষের পদ ফাঁকা। অধ্যক্ষের পদে নিয়োগ পেতে কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা আছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করার ক্ষেত্রে এর যোগসূত্র রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি অধ্যক্ষকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি নিরীহ মানুষ। রাত আটটার দিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এটি গোপন বিষয় এবং এ নিয়ে একাধিক মামলা রয়েছে। তাই আমরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। গলায় জুতার মালা পরিয়ে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে মানসিকভাবে হত্যা করা হয়েছে, শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়।
উল্লেখ্য, নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ঘটনার বিষয়ে বলেছিলেন, তিনি এবং পুলিশ সুপার যেখান থেকে শিক্ষক জুতার মালা পরানো হয়েছিলো সেখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে ছিলেন, আসলে আমি এবং এসপি প্রধান ফটকে ছিলাম। সেখান থেকে মাঠ ও পরে কলেজ ভবন, তাদের নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে, তিনি বলছেন, বিক্ষোভের উত্তেজনার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তারা মনে করছেন।