যশোরের মনিরামপুরের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর নিয়ে ঘটেছে নজিরবিহীন অনিয়ম। ভূমিহীন পরিচয়ে একজন নিয়েছেন ৬টি ঘর, আরেকজন নিয়েছেন ৪টি। আবার অনেকেই ঘর পেলেও সেখানে বসবাস করেন না। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটিয়েছেন আলতাফ হোসেন। তিনি ৬টি ঘর দখলে নিয়ে ৩টিতে এসি লাগিয়েছেন, মেঝেতে দিয়েছেন টাইলস, এবং বিলাসবহুল আসবাবপত্র দিয়ে ঘরগুলো সাজিয়েছেন। দুই স্ত্রী, সন্তান ও শ্যালিকাদের নিয়ে তিনি সেখানে বিলাসী জীবনযাপন করছেন।
মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২টি ঘরের মধ্যে আলতাফের দখলে থাকা উত্তর প্রান্তের ৬টি ঘর ব্যতিক্রম। ২০২১ সালে নির্মিত এই ঘরগুলোকে নিজস্ব খরচে গোলাপি রঙ, গ্রিল, এবং এসি দিয়ে উন্নত করেছেন তিনি। আলতাফ দাবি করেছেন, তিনি প্রকৃত ভূমিহীন এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে পরিবারপ্রতি ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। তার দুই ছেলে ঢাকায় চাকরি করেন, যাদের অর্থায়নে এসব ঘর সাজানো হয়েছে।
আলতাফের ভাষায়, “আমাদের ঘরে টাইলস, এসি, ফ্রিজ লাগানো দোষের কিছু না। আমরা সেগুলো নিজেদের টাকায় করেছি।” তবে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি এই ঘরগুলো দখল করেছেন।
এমনই আরেক ঘটনা ঘটিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের আত্মীয় এজাজুল হক মধু। তিনি ৪টি ঘর দখলে রাখলেও সেগুলোর একটিতেও স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না। তিনটি ঘর তার আত্মীয়স্বজনকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন, যা প্রায়ই তালাবদ্ধ থাকে।
এদিকে একই এলাকায় প্রকৃত গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষ রয়েছেন ঘরবিহীন অবস্থায়। খাটুয়া গ্রামের ডলি খাতুন, যিনি পুরো পরিবারসহ প্রতিবন্ধী এবং কোনো জমি বা স্থায়ী ঘর নেই, তিনি জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার আবেদন করেও একটি ঘর পাননি। ডলির করুণ আর্তি, “আমরা সবাই অসহায়। কেউ যদি আমাদের একটা ঘর দিত, তাহলে বাঁচতে পারতাম।”
স্থানীয়রা বলছেন, ঘর বরাদ্দের সময় সরকারি কর্মকর্তারা প্রভাবশালীদের চাপে যথেচ্ছাচার করেছেন। প্রকল্পের বেশির ভাগ ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের আত্মীয়স্বজন।
জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেছেন, “বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কি না তা তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে, প্রতিটি আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অথচ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রকৃত গৃহহীনরা রয়ে গেছেন ঘরবিহীন।