দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় সময় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে আসে যে তারা টাকা ধার নিলেও তা সঠিক সময় ফেরত দেন না। এমনকি নির্বাচনের সময় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে অর্থ ধার হিসেবে নেন। তবে নির্বাচন হওয়ার পর সেই অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা ভুলে যান অনেকে। এবার এক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে এসেছে যে তিনি নির্বাচনের সময় ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে তা আর ফেরত দেননি। ধার নেওয়া টাকা পরিশোধ না করায় অবশেষে সংসদ সদস্য কে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে ব্যয়ের জন্য ধার নেওয়া টাকা পরিশোধ না করা এবং ২০ লাখ টাকার চেক ব্যাংকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদারকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র বেলাল হোসেন প্রামাণিকের পক্ষে অ্যাডভোকেট মহাম্মদ সদরুল আনাম রঞ্জু এ নোটিশ করেন। বৃহস্পতিবার দেওয়া ওই নোটিশে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে দুটি চেক ফেরত নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এমপির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার প্রথমে টাকা ধার নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। পরে জানান, তিনি বেলালের কাছ থেকে টাকা নিলেও তা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু তাকে দেওয়া চেক দুটি ফেরত নেওয়া হলেও পরে তিনি (বেলাল) বাড়ি থেকে চুরি করে নিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করা হয়েছে।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বেলাল হোসেন প্রামাণিক জানান, গত ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বগুড়া-৩ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী নুরুল ইসলাম তালুকদার নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য তার কাছে টাকা ধার চান। তিনি তাকে নগদ ৬১ লাখ ও একটি জিপগাড়ি কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকাসহ মোট ৯১ লাখ টাকা ধার দেন। নির্বাচনে জয়লাভের পর বিভিন্নভাবে এমপি তাকে ৫১ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। অবশিষ্ট ৪০ লাখ টাকা পরিশোধে টালবাহানা করতে থাকেন।
লিগ্যাল নোটিশে অ্যাডভোকেট মহাম্মদ সদরুল আনাম রঞ্জু উল্লেখ করেন, এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদার তার মোয়াক্কেল বেলাল হোসেনকে গত ৭ জুন সোনালী ব্যাংক লিমিটেড দুপচাঁচিয়া শাখার চলতি হিসাব নম্বর ৪০২০০১২২৪ অনুকূলে ১০ লাখ টাকার দুটি চেক (নং-গচ/১০-৮৪৫৬৯২৪ ও নং-গচ/১০-৮৪৫৬৯২৫) দেন।
২৯ জুন চেক দুটি ব্যাংকে জমা দিলে জানানো হয়, হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা নেই। ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা এবং হিসাবটি ডরমেন্ট থাকার কারণে ডিসওনার হয়। এভাবে সংসদ সদস্য প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গসহ দ্য নিগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্ট, ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারায় অপরাধ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার দেওয়া ওই লিগ্যাল নোটিশে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সমুদয় পাওনা পরিশোধ করে চেক দুটি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বেলাল হোসেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন।
এমপির চেক চুরির অভিযোগ প্রসঙ্গে বগুড়া দুপচাঁচিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বেলাল হোসেন প্রামাণিক জানান, একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধির মুখে এমন মন্তব্য হাস্যকর। শিগগিরই টাকা পরিশোধ না করলে তিনি এমপির বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। সূত্র:পূর্বপশ্চিমবিডি
উল্লেখ্য, নির্বাচনের সময় ব্যয় করার জন্য ব্যাংক থেকে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি অর্থ নিয়ে থাকেন। তবে সেই অর্থ আর সঠিক সময় ফেরত দিতে পারেন না অনেকে। এ সময় ব্যাংক থেকে কয়েক বার চিঠি দেওয়া হলেও অনেকে এর উত্তর দেন না। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়। আর এবার এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠে এসেছে তার জন্য লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।