গত ২৫ শে জুন উদ্বোধন হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেতু পদ্মা সেতু এরপর ২৬ শে জুন থেকে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য এ পর্যন্ত যে ব্যয়িত অর্থ তার পরিমাণ (সংশ্লিষ্ট সব অবকাঠামো নির্মাণে) ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। তবে এই বিপুল পরিমান অর্থ সেতু থেকে উঠতে কত দিন সময় লাগতে পারে সেটা অনেকের নিকট প্রশ্ন। তবে সেতু থেকে যে পরিমান টোল আদায় হচ্ছে সেটা সেতু কর্তৃপক্ষের ধারনার চেয়ে বেশি।
যান চলাচল শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ ৫৭ দিনে ১৩৩ কোটির বেশি টোল আদায় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ২৬ জুন থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি যানবাহন চলাচল করে।
পদ্মা সেতু থেকে দৈনিক গড় টোল আদায়ের হার প্রায় আড়াই কোটি টাকা। সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকেই দিনরাত ক্রমাগত যানবাহন চলাচল করায় চারদিকে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের এ তথ্য জানান।
গত ২৬ জুন যান চলাচলের প্রথম দিনে ১৮ ঘণ্টায় মোটরসাইকেলসহ রেকর্ড সংখ্যক ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন পদ্মা সেতু অতিক্রম করে। যা থেকে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫৫০ টাকা। এর মধ্যে মাওয়া অঞ্চলে ২৬ হাজার ৫৮৯টি গাড়ির টোল বাড়ানো হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৮৭ হাজার ১৫০ টাকা। জাজিরা প্রান্তে ২৪ হাজার ৭২৭টি গাড়ির বিপরীতে ১ কোটি ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।
৮ জুলাই পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ৩১ হাজার ৭২৩টি যানবাহন রেকর্ড পরিমাণ আয় করেছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা। মাওয়া এলাকায় ১৯ হাজার ৬৬৭টি যানবাহনের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার ২৫০ টাকা। জাজিরা প্রান্তে ১২ হাজার ৫৬টি গাড়ির বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ টাকা।
বর্তমানে শুধু পদ্মা সেতুর আশপাশে ২০টি কোম্পানির বাস নতুন করে চালু করা হয়েছে। আর আগের কোম্পানিগুলোর বাসের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য রুটের বাসও আনা হচ্ছে এই রুটে। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়বে। সেজন্য সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস।
মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে হলে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। গাড়ি এবং জিপের জন্য ৭৫০ টাকা এবং পিকআপের জন্য ১২০০ টাকা। মাইক্রোবাসের টোল আদায়ের পরিমান ১৩০০ টাকা দিতে হবে।
বাসের আসনের ভিত্তিতে তিন ধরনের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। ছোট বাসে (৩১ আসন বা তার কম) ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে (৩২ আসন বা তার বেশি) ২০০০ টাকা এবং বড় বাসে (৩টি এক্সেল) ২৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
পণ্যবাহী যানবাহনের ক্ষেত্রে ছোট ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৫ থেকে ৮ টন) ২১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ থেকে ১১ টন) ২৮০০ টাকা, ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) ৫৫০০ টাকা এবং ট্রেলার। (৪ এক্সেল পর্যন্ত) ৬০০০ টোল দিতে হবে সেতু অতিক্রম করতে।
৪ এক্সেলের বেশি হলে ট্রেইলারে ৬ হাজার টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলে বাড়তি ১৫০০ টাকা দিতে হবে টোল বাবদ।
প্রকৃতপক্ষে মূল সেতু নির্মাণে যে ব্যয় সেটা এই পরিমাণ অর্থের তিন ভাগের এক ভাগ। বাকি যে টাকা খরচ হয়েছে সেটা নদী শাসন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, পুনর্বাসন সহ আরো বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে। তবে এই ব্যয়িত অর্থ উঠতে সেতু কর্তৃপক্ষ যে সময়ের কথা জানিয়েছিল তার আগেই এই অর্থ সেতু থেকে উঠবে বলে মনে করছেন। এ দিকে ষেতুতে যানবাহন চলাচলের পরিমান বাড়াতে বিশেষ কিছু পরিকল্পনা গ্রহন করেছে সড়ক বিভাগ।
Good