ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বেজমেন্ট থেকে উদ্ধার, স্কুল ড্রেস, জুতা, হাঁড় ইত্যাদি( ভিডিওসহ)

রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির নতুন ভবনের বেজমেন্ট ঘিরে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, সেখানে ‘আয়নাঘর’ নামে কোনো গোপন স্থাপনা থাকতে পারে। এসব দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

ফায়ার সার্ভিস বেজমেন্টে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করেছে, যাতে নিচে কোনো গোপন কক্ষ বা নির্মাণ রয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট হয়। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে কয়েকটি পানিনিষ্কাশন মেশিন স্থাপন করে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট কাজ শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন জানান, “আমাদের কাছে সাধারণ মানুষ ওই বেজমেন্টের পানি নিষ্কাশনের অনুরোধ জানান। পরে আমাদের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করছে। পানি নিষ্কাশনের পর ভেতরে কী রয়েছে, তা যাচাই করা হবে।”

উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইন বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। তারা পাশের নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্টে প্রবেশ করে এবং সেখানে বেশ কয়েকটি তলা দেখতে পায়। দুই তলা পর্যন্ত নামার পর নিচে পানি দেখে অনুমান করা হয়, আরও তলা থাকতে পারে।

অনেকের ধারণা, শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত প্রশাসনের ‘আয়নাঘর’ ধারণার বাইরে দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য এই নতুন বেজমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রশাসনই এই রহস্য উন্মোচন করবে।


মুহাম্মদ ইউনূস এবং আমি ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও সামনে এগিয়ে নিতে আগ্রহী

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক জটিল মোড়ে পৌঁছেছে। মনে হচ্ছে, ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পূর্বাভাস পেতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ ও সহযোগিতার সম্ভাবনাকে ভুলে গেলে চলবে না।

বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এবং আমি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে আগ্রহী। ভুল বোঝাবুঝি নিরসন ও সমস্যা সমাধানে আমরা গুরুত্বসহকারে কাজ করতে চাই। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট— পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই এবং আমরা আশা করি ভারতও বাংলাদেশের এই ইচ্ছাকে সম্মান জানাবে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সফর ইতিবাচক উদ্যোগ ছিল। বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক সহযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারত প্রযুক্তি ও অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশও পোশাক রপ্তানি ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ মডেল বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, যা ভারতেও ব্যাপকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। এই পরিবর্তনের শূন্যতার সময় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল, যা পূর্ববর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের পাশাপাশি কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বীকেও প্রভাবিত করেছে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্র্বর্তী সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় এবং জনগণও হিন্দু সম্প্রদায়, তাদের পরিবার ও মন্দির রক্ষায় সাহসী ভূমিকা রাখে। তবুও, ভারতের কিছু গণমাধ্যম ও সাইবারস্পেসে অতিরঞ্জিত বা ভুয়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভয়েস অফ আমেরিকার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অন্তর্র্বর্তী সরকারের অধীনে সংখ্যালঘুদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বিশ্বাস করে।

আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল হতে চাই। ভারতীয় জনগণ যাতে সঠিক তথ্য পায়, সেজন্য ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকার সার্ক জোটকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এখনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি, তবে আঞ্চলিক সহযোগিতা শক্তিশালী করার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ জরুরি।

আমরা কি পারি না, এ অঞ্চলের নেতাদের একত্রিত করে একটি প্রতীকী ছবি তোলা, যা আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরবে?

সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেছে— যেমন মৎস্যজীবীদের বিনিময় এবং নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির ত্রিপক্ষীয় চুক্তি।

একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হতে পারে সীমান্তে নিরস্ত্র বেসামরিকদের হত্যার অনুশীলন বন্ধ করা। পারস্পরিক সহযোগিতা ও ইতিবাচক মনোভাব বজায় রেখে দুই দেশের জনগণ অনেক কিছু অর্জন করতে পারে। এই সুযোগ নষ্ট করা ঠিক হবে না।

(লেখক: মো. তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত তার কলামের অনুবাদ)