জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে অর্থাৎ ডিসেম্বরে বা ২০২৪ সালের প্রথমদিকে এমনটাই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের সকল দল তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী দল গোছানোর কাজ বেশ সুচারুরূপে করে চলেছে। এদিকে বিএনপির সাথে বেশিরভাগ ধর্মভিত্তিক দলগুলো জোট গঠন করেছে। কিন্তু এবার ভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এই দলগুলো। দলগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার বিএনপির জোট থেকে সরে আসে নিজেরাই ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিবেন।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের বিরুদ্ধে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছে বিএনপি। এরই মধ্যে ১৪ দলের সঙ্গে প্রথম ধাপের সংলাপ শেষ করেছে দলটি। তারা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে।
তবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির এই সংলাপে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। এসব দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী নির্বাচনের এখনো দেড় বছরের বেশি সময় বাকি। এই মুহূর্তে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ বা মতবিনিময় হলে বিভিন্ন নানামুখী ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। তাছাড়া অন্য কোনো দল বা জোটে না গিয়ে নিজেরা সমঝোতায় আসতে পারবে কিনা তা নিয়েও দলগুলো আলোচনা করছে।
ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, হেফাজেত ইসলামের কর্মসূচিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর তাদের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যারা এখনো মুক্তি পায়নি। সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেও তাদের মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এখন সরকারের প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে উঠলে দম”ন-পী’/ড়ন বাড়তে পারে।
এ কারণে বিএনপির সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক সংলাপে অংশ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসব দল। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ধর্মীয় দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানায়নি বিএনপি।
জমিয়তে উলামা ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী গনমাধ্যমকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো আমন্ত্রণ পাইনি। আমন্ত্রণ জানানো হলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় এক নেতা বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে খুবই কম। কারণ তাদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিলে সরকারের রো”ষানলে পড়তে হবে।
ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভোটের রাজনীতির দিক থেকে বর্তমানে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির মহাসচিব ইউনুস আহমেদ শিখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, “বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে আমাদের দলীয় ফোরামে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তাছাড়া সংলাপে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণও পাইনি। আসলে আমরা করিনি। এই মুহূর্তে আমরা আমাদের দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত আছি। নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পরিদর্শন করেছেন। সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে কাজ করছেন।
আমন্ত্রণ পেলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ গনমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়ার কথা ভাবছি না। আসলে আমরা চাই ইসলামী দলগুলো নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি বা ঐকমত্য গড়ে তুলুক। এতে ইসলাম ও দেশবাসীর মঙ্গল হবে। আমরা অন্য কোনো জোট বা বিকল্প ভাবছি না।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব এম এ মতিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখনো তাদের (বিএনপি) পক্ষ থেকে কোনো আমন্ত্রণ পাইনি। তারা আমন্ত্রণ জানালে আমরা তাদের কথা শুনব। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। তবে, আমরা ব্যক্তিগতভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করব না।
মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের দীর্ঘদিনের অংশীদার ছিল। কিন্তু নিষ্ক্রিয়তার কারণ দেখিয়ে গত বছরের ১ অক্টোবর জোট থেকে বেরিয়ে যায় দলটি। দলটির আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক গনমাধ্যমকে বলেন, আমরা এখন স্বতন্ত্র দল। আমি স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে চাই। আমরা বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপে অংশ নেব না।
খেলাফত মজলিসের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কোন পরিস্থিতিতে আমরা ২০ দলীয় জোট ছেড়েছিলাম তা আপনাদের অবশ্যই মনে আছে। সেই অবস্থা এখনও বিদ্যমান। ফলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে নতুন কোনো বিপদে পড়তে চাই না।
বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রথম দফায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ তাদের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠী অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছে যে তারা এই মুহূর্তে সরকারের কিছু চাপের মধ্যে রয়েছে। তাই তারা এখনই বিএনপির সঙ্গে সংলাপে আগ্রহী নন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের প্রথম ধাপের সংলাপ শেষ, দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হবে। ধর্মীয় দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, সব দলের সঙ্গেই আলোচনা চলছে। সংলাপ হলে আপনারা দেখতে পাবেন।
গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি যার কারণে অনেক সংকটময় পরিস্থিতি পার করতে হয়েছে বিএনপির সাথে জোটে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে। নির্বাচনে অংশগ্রহন না করার ফলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো অনেকটা বিপাকে পড়ে। এবার এই দলগুলো জোট থেকে নিজেদের সরিয়ে এনে নিজেরাই সংলাপের মাধ্যমে বিকল্প সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানিয়েছে।