Tuesday , December 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ধরা পড়লো ফিলিং স্টেশনগুলোর তেল কম দেওয়ার অভিনব পন্থা

ধরা পড়লো ফিলিং স্টেশনগুলোর তেল কম দেওয়ার অভিনব পন্থা

একদিকে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি অন্যদিকে ফুয়েলিং স্টেশনগুলো থেকে তেল নেওয়ার সময় পরিমাপের কম দেয়ার ঘটনা, এ যেন উভয় সংকটে পড়েছে জ্বালানি তেল ব্যবহারকারীরা। এমন ধরনের দুর্নীতি অহরহই ঘটে চলেছে প্রায় প্রতিটি ফুয়েলিং স্টেশনে যা অনেকের চোখে পড়ে না। তবে এবার এক যুবকের মোটরসাইকেলে কম পরিমাণ তেল দেওয়ার বিষয়টি ধরতে পারার পর টনক নড়ে প্রশাসনের।

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে করিম অ্যান্ড সন্স নামের একটি ফুয়েলিং স্টেশনে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একটি দল। ওই স্টেশনে জ্বালানি তেল বিতরণের জন্য দুটি ডিসপেন্সিং মেশিনে টেম্পারিং বা কারসাজি করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। একটি মেশিনে প্রতি ৫ লিটার অকটেনে ৫৪০ মিলিলিটার এবং অন্যটিতে ৪৯০ মিলিলিটার জ্বালানি কম দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় পরিমাপযন্ত্রে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ টিম ওই ফুয়েলিং স্টেশনটিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করেছে। গত শনিবার এ ঘটনা ঘটে।

একই দিন ঢাকার রমনা ফুয়েলিং স্টেশনে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের দল। বেশি দামে জ্বালানি বিক্রির জন্য শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ফুয়েলিং স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফুয়েলিং স্টেশনে ২৭,৬২৩ লিটার অকটেন পাওয়া গেলেও শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, স্টেশনের কাগজপত্র চেক করলে দেখা যায় এর ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে; এমনকি স্টেশনের বি’/স্ফো”রক বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্সও ছিল না। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের জ্বালানি স্টেশনগুলোর একই অবস্থা। তাদের বেশির ভাগই কম জ্বালানি দেওয়ার জন্য তাদের বিতরণ ইউনিটে কারসাজি করছে। অনেক স্টেশনে জ্বালানি তেলেও ভেজাল রয়েছে। এতে প্রাইভেট কার বা যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনগুলো কেবল মাপে কম পাচ্ছে তাই নয়, ভেজাল জ্বালানির কারণে ইঞ্জিনের ত্রুটিও ঘটছে।

রাজধানীর একটি ফুয়েলিং স্টেশন থেকে মোটরসাইকেলের জন্য ৫০০ টাকা মূল্যের অকটেন কিনেছেন ইসতিয়াক আহমেদ নামের এক যুবক। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে কম তেল দেওয়া হয়। যুবক, যিনি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কাজ করেন, তিনি এই ধরনেরট ঘটনায় ‘আমি সঠিক পরিমাণে তেল চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও বিএসটিআইয়ের কয়েকটি দল জ্বালানি তেলের স্টেশনটিতে অভিযান চালায়। সারাদেশে অভিযানের নির্দেশও দেওয়া হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “শনিবার আমাদের টিম রাজধানীর দুটি ফুয়েলিং স্টেশনে বিভিন্ন সময় অভিযান চালায়। অভিযানের পর একটি প্রতিবেদনে একটি ফুয়েল স্টেশনে তেল কম দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। একটি স্টেশনে দেখা যায় যে লাইসেন্স সহ তাদের অনেক নথি সঠিক নয়।

ভোক্তা মহাপরিচালক বলেন, মতিঝিলে করিম অ্যান্ড সন্স ফুয়েলিং স্টেশনে জ্বালানি সরবরাহের জন্য ছয়টি ডিসপেনসিং ইউনিট রয়েছে। টিমের চলে যাওয়ার খবর পেয়ে তারা চারটি মেশিন ঠিক করে। বাকি দুটি মেশিন পরীক্ষা করে দেখা যায় তারা গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ কম জ্বালানি দিচ্ছে। অন্য কথায়, যদি একটি গাড়ি সেই মেশিন দিয়ে ৫০ লিটার তেল নেয়, তাহলে গড় তেল প্রায় ৫ লিটার কম। এটি একটি ভ”য়ান’/ক প্রতারণা। সফিকুজ্জামান বলেন, “আমরা ধরে নিচ্ছি, সারাদেশে জ্বালানি কেন্দ্রে এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। এজন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের সহায়তায় দেশব্যাপী প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। ইতিমধ্যে আমাদের টিম মাঠে নেমেছে। এর বাইরেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। সারাদেশে এ ধরনের অভিযান পরিচালনার জন্য রোববার বিএসটিআই ও বি”স্ফো’/রক পরিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আমরা মনে করি যে কোনো ডিসপেনসিং মেশিন যদি টেম্পারিং বা কারসাজি বা ভেজাল তেলের প্রমাণ পাওয়া যায় বা কাগজপত্র আপ-টু-ডেট না থাকে তবে তা অবিলম্বে সিল করে দেওয়া উচিত।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আরও জানান, গতকাল তিনি মানসম্মত জ্বালানি তেলের সরবরাহ ঠেকাতে পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

তবে জ্বালানি তেল ব্যবহারকারীদের ধারণা ফুয়েল স্টেশনগুলো থেকে যারা তেল নিয়ে থাকে তারা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয় বেশিরভাগ সময়ে। ফুয়েল স্টেশন কর্তৃপক্ষ কারসাজির মাধ্যমে গ্রাহকদের তেল কম দিয়ে এই প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে থাকে। তবে এ ধরনের বিষয়টি তারা যেকোনো সময় ঘটাতে পারে এমনটি জানিয়েছেন অনেক গ্রাহক। প্রশাসন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সরে গেলে তারা আবার তেল কম দেওয়ার কারসাজি ঘটাতে পারে।

About bisso Jit

Check Also

ভারতের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ফাঁস, বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন শেখ হাসিনা

ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *