সমাজের বিত্ববান কিছু সংখ্যক ব্যাক্তিদের প্রেমের ফাদে ফেলে রীতিমত বিপাকে ফেলছেন একদল নারী চক্র। যারা বিত্ববান পুরুষদের টার্গেট করে প্রথমের প্রেমের প্রস্তাব দেয়, পরে এই প্রস্তাবে যে সকল পুরুষেরা সারা দেয় তারাই পরবর্তীতে পড়ে বিপাকে। এই সকল ফাদে পড়া ধনী প্রেমিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে এই নারী চক্রের সদস্যরা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন তারা।
ধনী ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে বা অপহরণ করে। এরপর মুক্তিপণ বা অশ্লীল ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। অবশেষে জেলা ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তিন নারীসহ চক্রের চার সদস্য। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে প্রতারণা চক্রের এক নারীর সম্পর্ক ছিল। ১৬ মার্চ, ঘনিষ্ঠ চক্রের একজন মহিলা তাকে ফোন করেছিলেন। এরপর শুরু হয় বিপর্যয়। আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে তাকে জিম্মি করে দলটি। তার অবৈধ সম্পর্কের কথা ফাঁস করার হুমকি দিয়ে ৬ জুন পর্যন্ত একাধিকবার তার কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বিকাশ ঘটান এবং নগদ অর্থ প্রদান করেন। পরে তিনি ডাকাতদলের সদস্যদের জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত করতে মঙ্গলবার বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা করেন।
তার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই চক্রের চার সদস্যকে আটক করে জেলা ডিবি পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন আদালতে দোষ স্বীকার করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান জেলা ডিবির এসআই জুলহাস উদ্দিন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সংসারদীঘি গ্রামের নাসির উদ্দিন ও একই উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের রুনা আক্তার। তবে নাসিমা বর্তমানে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ফুলতলা বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। গ্রেফতার অপর দুইজন হলেন বগুড়া সদরের পূর্ব পলশা (পুরাতন বগুড়া) এলাকার আমেনা খাতুন ওরফে রেশমি ও বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবন গ্রামের সেলিনা আক্তার ওরফে ঝিনুক।
ঝিনুক বর্তমানে বগুড়া সদর কলোনী টোনাপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নাসির উদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের মধ্যে রুনা আক্তারের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি। ডিবির এসআই জুলহাস উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃত চারজন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করেছিল এবং তাদের প্রতারিত করেছিল। পরে লাখ লাখ টাকা নিত। ওই চক্রের নারীরা অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এবং গোপনে ভিডিও রেকর্ড করেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। তিনি আরও জানান, প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। নাসির উদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন নারীকে রিমান্ডে নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সমাজের বিত্ববান পুরুষরা কিছু নারী চক্রের নারীদের প্রেমের ফাদে পড়ে নানান ভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে যাদের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছেন তারাই পড়ছেন চরম বিপাকে। প্রেমের সময়ে তাদের ভিতরে ঘটে যাওয়া কিছু অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ধারনকৃত কিছু এভিডেন্সকে জিম্মি করে নানা ভাবে হয়রানি করে ভুক্তভোগী পুরুষদের, পরে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় বিপুল অর্থ এমনটাই না বলতে চাওয়ার শর্তে এক প্রতারিত হওয়া প্রেমিক জানিয়েছেন।