Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / দেশ ছাড়ছেন শিক্ষিত তরুণরা, উঠে এলো পেছনের দায়ী কারন

দেশ ছাড়ছেন শিক্ষিত তরুণরা, উঠে এলো পেছনের দায়ী কারন

দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমানো শিক্ষিত যুবকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তরুণ-তরুণীদের কথাবার্তায় বিদেশ যাওয়ার প্রসঙ্গ এখন সবকিছু ছাপিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই দেশে ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে বিদেশে যাচ্ছেন। ইংরেজি শেখার পর তারা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে যায়। সেখানে গিয়ে আবার উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হন। লেখাপড়া শেষে সে দেশেই থাকছেন। একসময় পরিবারকে নিয়ে যাচ্ছে। আবার দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়ে সেখানে স্থায়ী হচ্ছেন। প্রতি বছরই তরুণ-তরুণীদের বিদেশে যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।

স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশে যাওয়া বা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উচ্চ শিক্ষা শেষ করেও চাকরি না পাওয়া, যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না পাওয়া, আর্থিক অসচ্ছলতা, ভালো স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনিশ্চয়তা, প্রবেশাধিকারের অভাব। দুর্নীতি ছাড়া সেবা না পাওয়া, ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, দূষিত পরিবেশ, সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের মতো বিষয়গুলো তাদের দেশ ছাড়তে উৎসাহিত করছে।

এদিকে ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়। করো”নার দুই বছর পর ২০১৫ সাল থেকে এই সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই বছরে প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে। এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়ায় যাচ্ছে। সম্প্রতি ডেনমার্ক, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, সাইপ্রাস, ফিনল্যান্ডেও বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বাড়ছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস নামের জরিপ অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রতি হাজারে তিনজন দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান।

গত বছর এ সংখ্যা বেড়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে ফিনল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন নাসিমুল আহসান। দেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরিও করেছেন। ফিনল্যান্ডে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দুই বছর আগে আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর বারবার ভেবেছিলাম, যদি সঠিক চিকিৎসা পেতাম তাহলে তাকে হারাতে হতো না। হয়তো সৃষ্টিকর্তা তার জীবন রক্ষা করেননি, কিন্তু বাবার মন তা মানতে চায় না। তখন ভাবলাম এই দেশে আর থাকবো না। অনেক খোঁজখবর নিয়ে ফিনল্যান্ড যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

সেখানে চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের, সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব সরকারের। চাকরি না থাকলে ভাতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সরকারের। কেউ কারো পেছনে নেই। জীবনে ভালো হতে আর কি চাই? এদিকে আগামী বছরের শুরুতে স্ত্রীকে নিয়ে কানাডায় পাড়ি জমাচ্ছেন মুহতামিম নাঈম। ভিসাও পেয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি উচ্চ বেতনে দেশের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত আছেন। চাকরি ছেড়ে কানাডা যাওয়ার বিষয়ে নাঈম বলেন, ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কানাডা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উন্নত ও উন্নত জীবন দেওয়ার আশাও জড়িত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা রাকিব হাসান গত মে মাসে এমবিএ করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ডিগ্রি শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হতে চান তিনি। দেশে সাংবাদিকতার চাকরি ছেড়ে জার্মানিতে পাড়ি জমানো ঋষি দে এখন দেশের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন৷ দেখা গেছে, তুলনামূলকভাবে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে। কারণ বিদেশে পড়াশোনার জন্য ইংরেজি দক্ষতা অন্যতম যোগ্যতা। এই তরুণদের বেশিরভাগই সেখানে যায় এবং অর্থ উপার্জনের জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। কারণ বিদেশে যেতে আমাকে অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে।

বিদেশে থাকা-খাওয়ার খরচও নিজেকেই বহন করতে হয়। ফলে তারা রেস্টুরেন্ট, হোটেল, হাসপাতাল এবং সুপারশপে কাজ করে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, বেকারত্বের কারণে অনেকেই বিদেশে যাচ্ছেন। তবে বিদেশে গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে মন্দ হয় না। এটা তার জন্য ভালো এবং দেশের জন্য ভালো। তিনি রেমিট্যান্স পাঠাবেন। কিন্তু সব প্রতিভা যদি বিদেশে চলে যায় তাহলে দেশের বিরাট ক্ষতি হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে উদ্ভাবন দরকার। প্রতিভাবনদের ফিরে আসতে হবে। এ জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারা ফেরার সময় তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কাজ ও সম্মান যাতে পান, তার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে। আমাদের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। যে কারণে আপনি এখানে ডিগ্রি নিয়ে অনেক দেশে ভালো চাকরি পেতে পারেন না।

শিক্ষার মান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে আনতে হবে। আমি যখন ঢাবির উপাচার্য ছিলাম তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ছিল। উচ্চ শিক্ষিতদের বহির্মুখী মনোভাবের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে বেকারত্বকে দায়ী করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ-২০২২’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) মতে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে ৪৭ জন বেকার। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের যুব গোষ্ঠীর একটি বড় অংশ আর্থ-সামাজিক ঝুঁকিতে রয়েছে।

বৈষম্য ও মানসম্মত শিক্ষার অভাবের কারণে ৭৮ শতাংশ তরুণ মনে করে যে, তারা পড়াশোনা করে চাকরি পাবে না, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআইডিএস) জরিপে উঠে এসেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশই বেকার।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *