গত কয়েক দফায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এবং এই নির্বাচনে দুর্নীতি এবং কারচুপির মতো ঘটনা ঘটছে এমনটাই দাবি করে আসছে বিরোধী দলগুলো। তবে শুধু তারাই নয় বিশিষ্টজনদের মহলেও অনেকেই দাবি করছে বাংলাদেশে এখন আর গণতান্ত্রিক বিষয়টি নেই। সেটা বলার কারন হচ্ছে ভোটের বিষয়টি যেটা সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছভাবে হচ্ছে না। এবার এই বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খান।
ভারতে নির্বাচন চলে দুই-তিন মাস। ডিসির কাছে ব্যালট বাক্স থাকে। বাংলাদেশে কি এমন একজন ডিসি থাকতে পারে যিনি এক রাতের জন্য ব্যালট বাক্স রাখতে রাজি হবেন? তারা পক্ষপাতিত্বের কুখ্যাতি কিনে নিয়েছে। তাদের সেই সাহস নেই।
কোনো রাজনৈতিক দল তাদের বিশ্বাস করে না।
শনিবার কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত সুশাসনের জন্য নাগরিকদের (সুজন) অষ্টম জাতীয় সম্মেলনে আকবর আলী খান এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পেরেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতে নির্বাচন নিয়ে এমন প্রশ্ন নেই। ভারতে, যারা নির্বাচনী রিটার্নিং অফিসার হন তারা প্রশাসনের কর্মকর্তা। বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস এখন এতটাই দুর্বল যে কোনো রাজনৈতিক দল একজন ডিসিকে বিশ্বাস করে না।
আকবর আলী খান বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন অনেক চ্যালে”ঞ্জের সম্মুখীন। প্রথমত, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়। পৃথিবীর অনেক দেশ এই পদ্ধতি পরিহার করে ‘প্রপোরশনাল মেজরিটিকে’ গ্রহণ করছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের একতরফা সংসদীয় ব্যবস্থা। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ থাকলে সংসদে ভিন্নমত প্রতিফলিত হয়। তৃতীয়ত, আমাদের দেশের সমস্ত ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে। চতুর্থত, আমাদের সরকারপ্রধান আবার দলের প্রধান। রাজনৈতিক দলকে চাঙ্গা রাখতে তাকে নজর দিতে হবে। ফলে মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
সুজনের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, যে কোনো শাসনব্যবস্থায় টেকসই দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল শর্ত হলো শাসনের সব স্তরে কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ইদানীং কেউ কেউ বলেন, আগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র। এটি কোনো কাজের কথা নয়।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, দেশে সুধীসমাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। সুশাসনের মতো গণতন্ত্রের নানা বিষয়ে দেশ পিছিয়ে আছে। ডিজিটালাইজেশন ক্ষুদ্র দুর্নীতি কমিয়েছে, কিন্তু বড় দুর্নীতি বন্ধ করেনি, দুর্নীতি আঁকড়ে ধরেছে।
জাতীয় সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার সংক্রান্ত ২১ দফা জাতীয় সনদ উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, দুর্নীতি একটি বৈষম্যমূলক সমাজ তৈরি করেছে। রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার খর্ব করা হয়। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা না হলে, একটি জটিল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।
তিনি বলেন, ঐক্যমতের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। সনদ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হবে স্বল্পমেয়াদী নির্বাচনী সরকার গঠন, যার দায়িত্ব হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের সহ-সভাপতি হামিদা হোসেন। সুজনের যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, নির্বাহী সদস্য বিচারপতি আবদুল মতিন, আলী ইমাম মজুমদার, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।
তবে ক্ষমতাসীন দল ঠিক কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে কিংবা অন্যান্য দলগুলোর নিকট সেটা উপস্থাপন করতে পারবে সেটা এখন একটি প্রশ্ন। তবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গত ১৫ বছরে অনেকটাই পাল্টে গেছে। যার দরুন একটি ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে দেশে। যদি অন্য কোন দল ক্ষমতা লাভ করে থাকে তাহলে দেশে যে পরিস্থিতি আসবে তা সামাল দেওয়ায় কঠিন হবে এমন মন্তব্য করেছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।