দেশের রিজার্ভের পরিমান কমে যাচ্ছে দিন দিন। আর এটা এখন দেশের জন্য একটি অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দিকে রিজার্ভের টাকা নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এবার এ নিয়ে কথা বললেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেকটা বিরক্ত হয়েই তিনি জানালেন ‘রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি। এটা মানুষের কাজেই লাগছে, মানুষের কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশের রিজার্ভ নিয়ে বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়নে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সে জন্য আমরা আমাদের রিজার্ভ মানি দিয়ে একটি ফান্ড তৈরি করেছি, সম্পূর্ণ আমাদের টাকা দিয়ে, অর্থাৎ বাংলাদেশের রিজার্ভ মানি দিয়ে। আমি নিজেই এই তহবিলের নাম দিয়েছি, বাংলাদেশ উন্নয়ন অবকাঠামো তহবিল। অর্থাৎ বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল। আসুন এটি তৈরি করি এবং আমাদের সংরক্ষিত অর্থ দিয়ে এই তহবিল তৈরি করি। সেই তহবিল থেকে আমরা এই বন্দরের ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল, যে টাকা দিয়ে আমরা এই প্রথম কাজ শুরু করেছি। ভবিষ্যতে এই অর্থ দিয়ে, আমাদের রিজার্ভ মানি, আমরা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারি। আমরা খুব কম সুদে বন্দরকে ঋণ হিসেবে দিয়েছি। মোট ২ শতাংশ। এতে ঘরের টাকা ঘরেই থাকবে।’
অনেকেই ভাবতে পারেন কেন রিজার্ভের টাকা খরচ করা হচ্ছে। যারা প্রশ্ন করেন, রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়, আমি তাদের বলছি, রিজার্ভের টাকা গেল পেয়ারা বন্দরে, রিজার্ভের টাকা গেছে মানুষের খাবার কিনতে, সার কিনতে, মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে।
আজ প্রধানমন্ত্রী পায়রা বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং প্রায় ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি জাহাজ এবং প্রথম টার্মিনাল, ৬ লেনের সংযোগ সড়ক ও সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দর ও সমুদ্রের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১০০-১২৫ মিটার চওড়া, ১০.৫ মিটার গভীর চ্যানেল তৈরি হবে। এতে বন্দরে ৪০ হাজার টন কার্গো বা ৩ হাজার কনটেইনার জাহাজ লোড করার ক্ষমতা তৈরি হবে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং বাবদ খরচ হবে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। বেলজিয়াম ভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডি নাল ড্রেজিংয়ের কাজ করবে।
পায়রা বন্দরে ৮টি জাহাজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ২টি পাইলট ভেসেল, ২টি হেভি ডিউটি স্পিডবোট, একটি বয় লেইং ভেসেল, একটি সার্ভে বোট এবং ২টি টাগবোট। খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড কর্তৃক ৪টি জাহাজ নির্মাণ করা হয়েছে। আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেডের মাধ্যমে বয় লেইং ভেসেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৪ কোটি ৪৯ লাখ; ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড কর্তৃক নির্মিত সার্ভে বোট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা; নিউ ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড দ্বারা নির্মিত দুটি টাগবোটের দাম ৩৭.৩৫ কোটি টাকা।
বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আশা করা হচ্ছে যে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা এবং কার্যকরী কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে জেটি নির্মাণ কাজের চুক্তি মূল্য ৯১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং ইয়ার্ড নির্মাণ কাজের চুক্তি মূল্য ১০৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। নির্মাণাধীন জেটিতে ৪০,০০০ ধারণক্ষমতার জাহাজ বার্থিং এবং আনলোডিং সুবিধা থাকবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে রিজার্ভের পরিমান এখন ঠেকে গেছে ৩৫ বিলিয়নের নিচে। আর এটা দিন দিন আরো বেশি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের সকলের জন্য। জানা গেছে এ ঠেকে উত্তরণের জন্য আইএমএফের কাছে ঋণ এর জন্য সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ।