Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / দেশের একটি ইউনিয়নের নারীরা কখনও ভোট দেন না, জানা গেল কারন

দেশের একটি ইউনিয়নের নারীরা কখনও ভোট দেন না, জানা গেল কারন

নারীরা যদি ঘর থেকে বের হন তাহলে সেটা হবে পর্দার লঙ্ঘন- এমন ধরনের ফতোয়া দেন একজন বিশিষ্ট পীর। আর এই কারনে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা কোনো নির্বাচনে তারা ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাননি। ঐ পীরের নিষেধাজ্ঞা না মেনে যদি কোনো নারী তাদের ঘর থেকে বের হন তাহলে ঐ এলাকাজুড়ে নেমে আসবে অভিশাপ। ঐ এলাকায় মানুষেরা আ’ক্রা’ন্ত হবে কলেরা-বসন্তের মতো ছোয়াছে রোগে, যার কারনে আবারও মহামারী আকার নিয়ে সমগ্র এলাকা জুড়ে সংক্রমিত হবে। ফলে ঐ ইউনিয়নের যারা নারী ভোটার তারা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার পরেও তারা তাদের ভোট দিতে যাননি কখনোই। এই বিজ্ঞানের যুগেও বাংলাদেশে এমন ধরনের অপসংস্কৃতি বিদ্যমান। তবে তারা যেহেতু এটা বিশ্বাস করেন তাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের ভাগ্য নির্ভর করে শুধু পুরুষ ভোটারদের ওপর। এমনকি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্যরাও নির্বাচিত হন শুধু পুরুষদের ভোটে। পীরের আদেশকে প্রাধান্য দিয়ে এত দিন তাঁরা নিজের ভোটটিও প্রয়োগ করেননি। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় প্রথা মেনে ভোটকেন্দ্রে যান না এলাকার হিন্দু-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নারীরাও। ফলে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও ইউনিয়নের ১২ হাজার নারী ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তবে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে এলাকার নারীরা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে আশা করছে প্রার্থীরাসহ স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ষাটের দশকে ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া বাজারের পূর্ব পাশে বসবাস করতেন জৈনপুরের পীর মওদুদুল হাসান। ওই সময় এলাকায় কলেরা-বসন্ত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মহামারি থেকে রক্ষা পেতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এ সময় পীর মওদুদুল হাসান জানান, নারীদের বেপর্দার কারণেই এ মহামারি। তাই নারীদের কখনোই পর্দার খেলাপ করা যাবে না। এর কিছুদিন পর ভারতের জৈনপুরে চলে যান পীর মওদুদুল হাসান। স্বাধীনতার পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সুবিধাবাদীরা তাঁর কথার ওপর রং চড়িয়ে প্রচার করেন, নারীরা ভোট দিলে এলাকায় আবারও কলেরা-বসন্ত ছড়িয়ে পড়বে। ব্যস, সেই থেকে আজ পর্যন্ত নারীদের ভোট দেওয়া বন্ধ! ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম কাউনিয়া, চর পক্ষিয়া, চর মান্দারি, উত্তর ও দক্ষিণ সাহেবগঞ্জ, সাহেবগঞ্জ, গৃদকালিন্দিয়া, চর মুঘুয়া গ্রামের নারীরা যুগের পর যুগ ধরে নিজ ইচ্ছায়ই ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন।

রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে ১২ হাজার ১১৪ জন নারী ভোটার রয়েছেন জানিয়ে ফরিদগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরুন্নবী নোমান বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের যুগে এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। নারীদের ভোটদান নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি এলাকার শিক্ষিতদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।’ তবে এ নিয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পুরুষ সদস্য প্রার্থীরা কথা বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে গতকাল গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা-হাসমত ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে ভোটদানে উদ্বুদ্ধকরণ সভায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি বলেন, আগামী রবিবার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে ভোট হয়, তার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশজুড়ে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐ ইউনিয়নে। কিন্তু তারা যাতে নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রদান করে সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন এনজিও এবং সরকারী সংস্থা। তবে সেখানকার নারী ভোটারদের ভোট দানে উদ্ভুদ্ব করা হলেও তারা ভোট কেন্দ্রে যাবে কিনা সে বিষয়টিও এখন একটা স্পষ্ট নয়। যেহেতু সেখানকার জনপ্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট জনেরা এই বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেনি সেহেতু নারীরা তাদের ভোটাধিকার প্রদান করবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

About

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *