বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশব্যাপী এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই লোডশেডিং দুই ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। আর এখন থেকে সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ থাকবে। খরচ বাঁচাতে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এ তথ্য জানান। আজ সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা জানান উপদেষ্টা।
জ্বালানি বাঁচাতে মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষামূলক এক ঘণ্টার লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তবে বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের আট জেলায় লোডশেডিং হবে না। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এসব জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। বুধবার লোডশেডিংয়ের এই সময়সূচি প্রকাশ করেছে ওজোপাডিকো। লোডশেডিং থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আটটি জেলা হলো বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর। ওই তফসিলে খুলনাসহ ১৩টি জেলার তথ্য দেওয়া হয়েছে। ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওজোপাডিকো সূত্রে জানা গেছে, ওজোপাডিকো দক্ষিণের ২১টি জেলা শহর ও ২০টি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। জেলা শহরগুলো হলো খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর।
এ ছাড়া ২০টি উপজেলা হলো ফুলতলা, মংলা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, শৈলকুপা, আলমডাঙ্গা, ভেড়ামারা ও কুমারখালী। এ ছাড়া পাংশা, গোলন্দ, মধুখালী, সদরপুর ও ভাঙ্গা। আর বরিশাল বিভাগের ভান্ডারিয়া, বোরহানউদ্দিন, ক্যানালসিটি, কাঁথালিয়া, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা। এই ২১ জেলায় প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আজহারুল ইসলাম জানান, খুলনা, বরিশাল বিভাগ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জসহ ২১টি জেলা শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ওজোপাডিকোর আওতায় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় ওই ৮ জেলায় বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। সে কারণে ওই সব জেলায় লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন নেই। তবে বাকি ১৩টি জেলায় লোডশেডিং রয়েছে। এসব জেলার লোডশেডিংয়ের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। দৈনিক লোডশেডিংয়ের সময়সূচি একদিন আগেই প্রকাশ করা হবে। তবে সরবরাহ সাপেক্ষে ঘাটতি অনুযায়ী তফসিল প্রকাশ করা হবে।
এদিকে লোডশেডিংয়ের প্রথম দিনে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলায় লোডশেডিং হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ওজোপাডিকো ও পল্লীতে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ৩২৮ মেগাওয়াট। ওজোপাডিকোর কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২ হাজার ৮৯ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ১ হাজার ৭৬১ মেগাওয়াট। ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে ৩২৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ওজোপাডিকোর বিদ্যুতের চাহিদা ৫৮৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৫১৯ মেগাওয়াট। ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ৬৬ মেগাওয়াট। এছাড়া ১ হাজার ৫০৪ মেগাওয়াট পল্লী বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ২৪২ মেগাওয়াট। ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ২৬২ মেগাওয়াট।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকাংশে কমে গেছে। সরকার বলছে, গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলা বাজার বা স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি কেনা বন্ধের বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে।