Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / দেখা করার আমার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু ও তো আসেনি: ভারত সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী

দেখা করার আমার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু ও তো আসেনি: ভারত সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের একটি রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে গিয়েছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে পরস্পরের সহযোগিতামূলক বিষয়ে আলোচনা করবেন। গতকাল বিমান যোগে ভারতের নয়াদিল্লিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে আসেননি। তাকে স্বাগত জানাতে আসেন দেশটির একজন প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশ হাইকমিশনে নৈশভোজে অংশ নেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ আমি বন্ধুত্ব চাইতে এসেছি। আমি বন্ধুত্ব চাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। উপমহাদেশের দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক হবে তিন ধরনের- রুদ্ধদ্বার, ব্যক্তিগত ও দ্বিপাক্ষিক। নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউসে এই বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ঘোষণা করা হতে পারে। বৈঠক শেষে ঘোষিত যৌথ ইশতেহারে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা দেওয়া হবে। ২০১৫ সাল থেকে শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি ১৬ বার বৈঠক করতে যাচ্ছেন।

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদ্বীপ ধনখরের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। আজ সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর শেখ হাসিনা রাজঘাটে গান্ধীর সমাধিতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে হায়দরাবাদ হাউসে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবেন, তারপরে একটি ব্যক্তিগত বৈঠক এবং অবশেষে দুই দেশের প্রতিনিধিদের সাথে একটি আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। হবে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং যৌথ ইশতেহার ঘোষণা।

কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শুধু দুই শীর্ষ নেতা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। এ ধরনের বৈঠকে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি উপস্থিত থাকে না। এর কোনো লিখিত এজেন্ডাও নেই। দুই শীর্ষ নেতা আলোচনা করে নিজেরাই সব সিদ্ধান্ত নেন। অন্য কেউ এই বৈঠকের কোনো তথ্য জানার সুযোগ নেই। একটি ব্যক্তিগত বৈঠকে দুই শীর্ষ নেতা ছাড়াও এক বা একাধিক প্রতিনিধি থাকার বিকল্প রয়েছে। সাধারণত আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিভিন্ন চুক্তি, সমঝোতা ও ঘোষণার বিষয়ে দুই শীর্ষ নেতা স্বল্প পরিসরে কথা বলে নেন। আর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব প্রতিনিধিকে নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করা হয়।

ঢাকা ও দিল্লির কর্মকর্তারা জানান, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও সংযোগ সহযোগিতা, পানি সম্পদ সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা। আজকের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি নিষ্কাশন, রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, শিল্প ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহযোগিতা, দুই দেশের জাতীয় সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশ রেলওয়েকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সহযোগিতা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা। দুই দেশের সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) স্বাক্ষরের একটি রূপরেখা ঘোষণা করতে পারে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক রাজনীতি-অর্থনীতি ও মিয়ানমার থেকে আগত শরনার্থীদের সংকট সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আবারও ঐতিহ্যবাহী তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ উঠবে। তবে এই সফরে তিস্তা চুক্তির কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না কূটনীতিকরা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মূল এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে রাখাইনে সাম্প্রতিক অস্থিরতা মিয়ানমার থেকে আগত শরনর্থীদের প্রত্যাবাসনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে কি না তা নিয়ে শ”ঙ্কা রয়েছে। ভারতেও কিছুটা অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা কারো জন্য ভালো না। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতির কারণে গোটা বিশ্ব যে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে তাও আলোচনায় এসেছে। সংকট ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার সুযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মূল দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনায় ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা প্রয়োজনীয় পণ্যের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলাদেশের একটি পূর্বাভাস পাওয়া উচিত। বর্তমান জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় ভারতে পেট্রোল-ডিজেলসহ এ ধরনের পণ্যের উদ্বৃত্ত থাকলে নেপালের সঙ্গে আমদানি ও চলমান জলবিদ্যুৎ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। সচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরের তালিকায় এখনো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের চূড়ান্ত ছোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। রাতেই তাদের ফাইনাল হবে। পরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই নেতার উপস্থিতিতে এগুলো সই হবে।

বন্ধুত্ব চাইতে এসেছি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্ধুত্ব চাইতে এসেছি। আমি বন্ধুত্ব চাই। আমি খুব আশাবাদী, সফর খুব ভালো হবে, ইনশাআল্লাহ। তবে সারপ্রাইজের কথা বলতে পারব না। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত নৈশভোজে কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মমতার সঙ্গে দেখা করার আমার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ও তো আসেনি। মমতা আমার বোনের মতো, আমি ওকে স্নেহ করি। ওর সঙ্গে রাজনীতির বাইরে আমার সম্পর্ক। ও যখন চাইবে তখনই আমার সঙ্গে দেখা করতে পারে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সম্পর্ক গান্ধী পরিবারের সঙ্গে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।

তিস্তা চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি দিচ্ছে না বলে ইলিশ পাচ্ছে না। আমরা এখন দুর্গাপূজার জন্য সময় দেই, একে বলা হয় বিশেষ সময়। তবে নিয়মিত পেতে হলে পানি দিতে হবে। তিনি বলেন, অভিন্ন নদীগুলো ড্রেজিংয়ের জন্য একটা প্রস্তাব দিয়েছি। দুই দেশ একসঙ্গে ড্রেজিং করলে ভালো হয়। এরই মধ্যে পলি জমে নদীগুলোতে পানির প্রবাহ কমে গেছে। এই উদ্দেশ্যে ভারত এলওসি (লাইন অফ ক্রেডিট) থেকে অর্থ দিলে ভাল হয়। টাকা না দিলেও কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আমরা চেষ্টা করব। এ ছাড়া বন্যার সময় যে পানিটা চলে আসে তা কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তার একটা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। ভারত এ ব্যাপারে সাহায্য করলে ভালো হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে ঢাকা থেকে বিশেষ ফ্লাইটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে লাল গালিচায় স্বাগত জানানো হয়।
বিমানবন্দরে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হন ভারতের রেল প্রতিমন্ত্রী ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ। আরও হাজির হয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে নিযুক্ত হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। তার সম্মানে বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয় এবং সেইসাথে সেখানে একটি সাংস্কৃতিক দল প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে নৃত্য পরিবেশন করে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আজ বিকেলের দিকে সৌজন্য সাক্ষাতে অংশ নেবেন বলেও জানা গেছে।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *