Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / দুর্বলতা নিয়েই এবার বড় জমায়েতের লক্ষ্য নিয়ে নামছে দলটি

দুর্বলতা নিয়েই এবার বড় জমায়েতের লক্ষ্য নিয়ে নামছে দলটি

বিএনপি দেশের তিনটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করার পর সফলতা অর্জন করতে পেরেছে বলে মনে করছে দলটির শীর্ষ নেতারা। এবার রংপুরে গণ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিভাগীয় শহর খুলনায় গণসমাবেশ করার সময় যেসব বাধার সম্মুখীন হয়েছিল বিএনপি, তেমনটাই হতে পারে রংপুরেও, এমনটা মনে করছে দলের নেতারা। তবে তিনটি বিভাগীয় শহরে বিএনপি যেমন সাহস যোগাতে সক্ষম হয়েছে নেতাকর্মীদের, সে ক্ষেত্রে রংপুরেও বিভাগীয় সমাবেশ সফল হবে এমনটাই মনে করছে দলটি।

রংপুর ও এর আশপাশের জেলায় অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের জনসমর্থন বেড়েছে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এটাকে পুঁজি করে তারা দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থার মধ্যেও বড়সড় সমাবেশ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে রংপুর এলাকায় ধর্মীয় দলগুলো বেশ সক্রিয়।

সমাবেশে তাদের অনেক কর্মী-সমর্থক ও অনুসারী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। ২৯ অক্টোবর শনিবার রংপুরে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা স্কুল মাঠে বিএনপি আবেদন করলেও সেখানে অনুমতি মেলেনি। স্থানীয় ঈদগাহ মাঠ ব্যবহারের মৌখিক অনুমতি পেয়েছেন।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সভা-সমাবেশে বাধা দিয়ে ভী”তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেও বড় ধরনের সমাবেশ হয়েছে। এতে রংপুরেও কর্মসূচি সফল করতে তাদের দায়িত্ব বেড়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, রংপুরের সমাবেশের দিন রাজধানীতে বড় সমাবেশ করতে চায় আওয়ামী লীগ। তাই ওইদিন বিএনপির সমাবেশে বড়সড় জমায়েত তারা চাইবে না। সে জন্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ বা খুলনার মতো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে বলে মনে করেন তারা।

অনুপ্রেরণা চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চতুর্মুখী বাধা সত্ত্বেও অবশেষে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় বড়সড় সমাবেশ করেছে বিএনপি। এর পেছনে দলের নেতাকর্মীদের জেদ ও দেখে নেতা-কর্মীদের দিন দিন সাহসী হয়ে উঠছে। অন্যান্য বিভাগেও একই ধরনের মনোভাব গড়ে উঠেছে। সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে রংপুরের নেতাকর্মীরাও যে কোনো উপায়ে সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও খুলনার জনসভা নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সদস্যরা দলীয় নেতাদের সাহসী ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ধারা অব্যাহত রেখে সামনের কর্মসূচি সফল করার নির্দেশনাও আসে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে।

ভয় দেখানোর অভিযোগ

রংপুরের নেতাকর্মীরা ২৯ শে অক্টোবরের জনসভাও ব্যাহত হওয়ার আশ’ঙ্কা করছেন। পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হতে পারে বলেও তারা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছেন।

রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী বলেন, নেতাকর্মীদের হুমকি দেওয়া শুরু হয়েছে। আত’/ঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, সমাবেশ অন্য বিভাগের চেয়ে ছোট হবে না। সমাবেশে রংপুর বিভাগের ১০টি সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন।

চট্টগ্রামে সমাবেশ চলাকালে জেলার পর জেলা অবরোধ করা হয়েছে। ময়মনসিংহেও আকস্মিক ও অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে। সমাবেশের দিন ও তার আগের দিন খুলনায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। বন্ধ ছিল নৌপথও।

এখন রংপুরে বিএনপি কীভাবে বাধা দেয় তা দেখেই পাল্টা কৌশল নেবে বিএনপি। পরিবহন ধর্মঘট ডাকলে আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে রংপুরে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

জনসমর্থন বাড়ছে

রংপুরে সংগঠন দুর্বল হলেও বিএনপির জনসমর্থন বাড়ছে বলে দাবি দলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের। এর পক্ষে গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের দিকে ইঙ্গিত করেছেন তারা।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, গত সংসদ নির্বাচনে রাতেই ব্যালটে সিল মা”/রা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও প্রায় সব আসনেই আগের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবম জাতীয় সংসদের ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-২ আসনে বিএনপি ৫৩ হাজার ৩৫০ ভোট পায়। ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী ৩৬ হাজার ৬৪৩ ভোট পেয়েছিলেন। রংপুর-৩ আসনে মহাজোট প্রার্থী এইচ এম এরশাদের বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট। ২০০৯ সালে বিএনপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ১৯ হাজার ৬৪০ ভোট। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ আসনে মহাজোটের (আওয়ামী লীগ, জাপা) প্রার্থী প্রায় দুই লাখ ভোট পেয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ১৭৭ ভোট। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় একই অবস্থা বলে দাবি বিএনপি নেতাদের। সেখানেও বিএনপির জনসমর্থন বেড়েছে।

দলীয় নেতারা জানান, রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ভালো অবস্থানে রয়েছে। সেখানে সব সময়ই এই দুই দল জাতীয় নির্বাচনে ভালো ফল করছে। তবে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে বিএনপির জনসমর্থন বাকি চার জেলার চেয়ে কিছুটা বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। তাই গণসভায় ওই চার জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকরা আসবেন বলে আশা করছেন রংপুরের নেতারা।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, রংপুরকে আর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাঁটি বলা যায় না। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তা প্রমাণ করবে। সেখানে বিএনপি এখন অনেক বেশি জনপ্রিয়। সংগঠন আগের চেয়ে শক্তিশালী। অন্যান্য বিভাগের মতো সেখানেও মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো বিরোধী দলকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দেয়নি। রংপুরও তাই করবে।

বিএনপি আন্দোলনকে অন্যতম পথ হিসেবে দেখছে, কারণ একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে হটানো সম্ভব করবে, এমনটাই মনে করছেন তারা। তবে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই বিএনপির। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন এক মাত্র পথ। বিএনপি আন্দোলনের সাথে সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসছে এবং কিভাবে সরকারকে ক্ষমটা থেকে নামানো যায় সে বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে কাজ করার প্রত্যয় জানাচ্ছে বলে ও দলটি দাবি করছে।

About bisso Jit

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *