দুর্নীতিবাজদের দ্রুত জামিন দেওয়া নিয়ে যা বললেন প্রধান বিচারপতি

১০ লাখ টাকা ঘুষসহ গ্রেপ্তার রাজশাহীর উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের ওপর স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও তিন মাস বৃদ্ধি করেছে আপিল বিভাগ। এ সময় আদালত মন্তব্য করেন, দুর্নীতিবাজদের দ্রুত জামিনকে জনগণ ভালোভাবে নেয় না।

আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও সাঈদ আহমেদ রাজা। অপরদিকে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

শুনানির শুরুতে আসামিদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি তাদের উদ্দেশে বলেন, আমরা-আপনারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলি। আবার দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি কারাগারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জামিন আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে আসেন। ৩ মাসের মাথায় কোনো দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে উচ্চ আদালত জামিন দিলে সেটা সমাজ ভালোভাবে নেয় না। মানুষ ভালোভাবে নেয় না।

এর পর প্রধান বিচারপতি আবারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স পুনর্ব্যক্ত করেন।

শুনানি শেষে ১০ লাখ টাকা ঘুষসহ গ্রেপ্তার রাজশাহীর উপ কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আরও তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন আদালত। একই সঙ্গে মহিবুল ইসলামের জামিন সংক্রান্ত রুলের শুনানি করতে বলেন।

এর আগে রাজশাহী নগরীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার পাঁচ বছরের ব্যাংক লেনদেন নিয়ে আপত্তি জানান কর কর্মকর্তা মুহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া। বিষয়টি মিমাংসা করতে ফাতেমার কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তিনি, পরে তা ৫০ লাখে ফয়সালা হয়।

ফাতেমা সিদ্দিকা গত ২৯ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের বিষয়ে দুদকের রাজশাহী জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয় যৌথভাবে কাজ করছে। তারা উপ কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া মনিটরিং করছিলেন।

পরে ৪ এপ্রিল রাজশাহী কর ভবনে অভিযান চালিয়ে রাজশাহী কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার (সার্কেল-১৩) মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে ১০ লাখ টাকা ঘুষসহ গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় দুদক রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মহিবুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের ১৬১ ধারায় মামলা করেন।

রাজশাহীর উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

১৮ এপ্রিল তাকে রাজশাহী মুখ্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে (সিএমএম) হাজির করা হয়। ওই দিন আসামির আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। তবে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আল আসাদ আশিকুজ্জামান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে মহিবুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এরপর ১৪ আগস্ট আপিল বিভাগ ১০ লাখ টাকা ঘুষসহ নিজ দপ্তরে গ্রেপ্তার হওয়া রাজশাহীর উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে করা দুদকের আবেদনের শুনানি দুই মাস স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখে।