সম্প্রতি গ্যাসের চুলার আ/গুনে দগ্ধ হয়ে মা/রা যান কুমিল্লার কলেজ শিক্ষিকা মুনা। তিনি সকালে রান্না করতে গেলে গ্যাসের চুলায় লিকেজ থাকার কারনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে তার এই ঘটনাকে দুর্ঘনা হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তার পরিবারে দাবি সে দুর্ঘটনা্য় মা/রা যায়নি তাকে হ/ত্যা করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ তার স্বামী এ ঘটনার সাথে জড়িত।
তার মৃত্যুর পর স্বামী সালাউদ্দিন সুমন বলেন, ৩০ আগস্ট রাত ১টায় চুলায় আগুন জ্বালাতে গিয়ে কেরোসিনের বোতল গায়ে পড়ে অগ্নিদগ্ধ হন মুনা। তবে তার বক্তব্য এবং সে রাতে বাসায় ছুটে যাওয়া প্রতিবেশীর বক্তব্যে বিস্তর ফারাক। মুনার বোন দাবি করেছেন, মৃত্যুর আগে বলে গেছেন তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব বিষয় পুলিশকে জানিয়েছেন তারা।
কুমিল্লার কলেজশিক্ষিকা তাহমিনা আক্তার মুনার মৃ/ত্যু দুর্ঘটনাজনিত অ/গ্নিকাণ্ড নাকি অগ্নিসংযোগে তাকে হত্যা করা হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে।
স্বজনদের দাবি, মুনা তার স্বামীর চক্রান্তের শিকার।
সেই রাতের ঘটনা নিয়ে সুমন যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রতিবেশীর বক্তব্যে, যিনি আ/গুন লাগার পর এই নারীকে হাসপাতালে নিতে চেয়েছিলেন।
মুনার স্বজন ও সুমনের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তি জানান, বেশ কয়েকটি মেয়ের সঙ্গে সুমনের সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে পরিবারে ঝগড়া চলছিল।
প্রায় এক সপ্তাহ শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মুনা মা/রা যান।
তার মৃত্যুর পর স্বামী সালাউদ্দিন সুমন বলেন, ৩১ আগস্ট রাত ১টায় চুলায় আ/গুন জ্বালাতে গিয়ে কেরোসিনের বোতল গায়ে পড়ে অ/গ্নিদগ্ধ হন মুনা।
চুলার পাশে কেরোসিন কেন রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ঘরে বারবিকিউ করেছেন। তাই কেরোসিন ছিল।’
মুনারা ১১ বোন। মুনা দশম সন্তান। তার বাবা মা/রা গেছে। মা গুলশান আরা অভিযোগ করেন, মেয়ের সঙ্গে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটেছে। তিনি বলেন, “আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সব তথ্য দিয়েছি। এখন সত্য উদঘাটনের অপেক্ষায় আছি।’
সালাহউদ্দিন সুমনের শ্যালক শওকত জামান জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাত ৯টার দিকে পাথুরিয়াপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে মুনার লা/শ দাফন করা হয়েছে।
প্রেমের বিয়ে, পরে জটিলতা
২০১৭ সালে মুনা ও সুমনের বিয়ে হয়। কিন্তু মুনার পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। তাদের সাফা নামে আড়াই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
সুমনের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায়। মুনার বাবার বাড়ি কুমিল্লা শহরের পাথুরিয়া পাড়ায়।
মুনা কুমিল্লা মডেল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি শহরের রেসকোর্স এলাকার একটি বাড়ির পঞ্চম তলায় থাকতেন। তার স্বামী সালাহউদ্দিন সুমন নিজেকে একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে পরিচয় দিলেও, আবার বলতেন ফ্রিল্যান্সার। তার আয়ের উৎস নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। কিন্তু মাজারে ঘুরে বেড়ানোর প্রবণতা ছিল।
কুমিল্লা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন বলেন, ‘মুনা ভালো শিক্ষক ছিলেন। বেশি কথা বলতেন না। সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল।
বেশ কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সুমনের। গোপনে একাধিক বিয়ের কথাও প্রচার হয়েছিল। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ হতো।
যা ঘটেছিল ৩১ আগস্ট রাতে
রাত ১টায় আরেক সংস্কৃতিকর্মী স্যাম আল মামুনকে ফোন করেন সালাহউদ্দিন সুমন। জানান আগুনের কথা।।
মামুন দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে বলেন, “রাত ১টায় সুমন ভাইয়ের ফোন পাই। তিনি আমাকে বলন, তার ঘরে আ/গুন লেগেছে। স্ত্রী দ/গ্ধ হয়েছেন। খবর পেয়ে আমরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রেসকোর্স রওনা দিই।
পৌঁছানোর আগেই পাশের বাড়ির আরেক মহিলা সুমন ভাই মুনাকে নিয়ে ঝাউতলা মুন হাসপাতালে আসেন। দ/গ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা যাচ্ছে না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ততক্ষণে আমরা অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেই। তাই একটি অটোরিকশা নিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে বার্ন ইউনিটে মুনাকে চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করা হয়।’
এরপর আবার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয় বলে জানান মামুন। বলেন, ‘সুমন ভাই ও তার স্ত্রীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে বাসায় ফিরি। সে সময় আমার এক বন্ধুকেও পাঠিয়েছিলাম তাদের সঙ্গে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী জানান, সুমন তাদেরকে ফোন দিয়ে বলেন যেন ফেসবুকে তাকে নিয়ে সবাই পোস্ট দেন। পোস্টে যেন সবাই লিখে এটা শুধুই একটা দুর্ঘটনা। আর কিছু না। তবে সুমনের এমন অনুরোধে সাড়া দেননি সাংস্কৃতিক সেক্টরের সহকর্মীরা।
সুমনের তথ্যের সঙ্গে প্রতিবেশীর বক্তব্য বিস্তর ফারাক
সোমবার মুনার ওই বাড়িতে গিয়ে অনেক তথ্য জানা যায়।
পাশের বাড়ির ভাড়াটিয়া মানোয়ারা বেগম বলেন, সেদিন রাত তখন ১টা। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দরজা খুলি। দেখি সুমন ভাইয়ের স্ত্রী মুনা চিৎকার করে বলতেছে, ‘ভাবি, আমার বাচ্চা সাফাকে দেখে রাইখেন।’
সে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল। আমি সাফাকে আমার মেয়ের কাছে দিয়ে আমিও নিচে নেমে আসি। সুমন ভাই পরে নামলেন। আমি তাকিয়ে দেখলাম, মুনার শরীর মা/রাত্মকভাবে পুড়ে গেছে।”
মামুন জানান, সুমন যাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল তার নাম মানোয়ারা।
কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল তা নিয়ে সুমন এবং তার বক্তব্যের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেন, তিনি বলেন, ‘ওই দিন বাসায় কোনো সিলিন্ডার বি/স্ফোরণ শুনি নাই। সুমন ভাই যে বলছেন বাসায় বারবিকিউয়ের আয়োজন করেছে, তাও দেখি নাই।’
পরের দিন সুমনের মা শামীমা আক্তার ও তার কাজের মেয়ে এসে তাদের ঘর পরিষ্কার করেন বলে মানোয়ারা জানান। বলেন, তারা যাওয়ার সময় সাফাকে তার কাছ থেকে নিয়ে যান।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার আমিনুর রশিদ বলেন, “রোগীর (মুনা) বুক থেকে হাঁটু পর্যন্ত পু/ড়ে গেছে। বলা যায় শরীরের ৬৬টি অংশ পুড়ে গেছে। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করি।
মুনার পরিবারের মনে নানা সন্দেহ
মুনার বড় বোন মাসুমা বেগম বলেন, ‘অনেক ঘটনাই আমাদের কাছে সন্দেহজনক। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সব বলেছি।
কী সন্দেহজনক মনে হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জানাব পুলিশ তদন্ত শেষ করুক। আমাদের মুনার মেয়ে সাফা এখন তার দাদির কাছে আছে। আমরা সাফাকে নিয়ে চিন্তিত।’
মুনার বড় বোন মাসুমা খাতুন বলেন, “আমার বোন হাসপাতালে থাকতে বলেছে। ওই রাতে সুমন তার ফ্ল্যাটের পানির লাইন বন্ধ করে দেয়। পরে কেরোসিন দিয়ে আ/গুন লাগিয়ে দেয় মুনার শরীরে।’
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে সুমন তার মেয়েকে হ/ত্যার হু/মকি দেয় এবং তাকে বলতে বাধ্য করে যে তার মৃ/ত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় এবং সেই বক্তব্য ভিডিওতে রেকর্ড করেছে।
মাসুমা জানান, মুনার মৃ/ত্যুর পর সুমন তার লা/শ নিতে যাননি।
সুমন কেন এমন করেছে সে বিষয়ে মুনা কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে মাসুমা বলেন, ‘সুমন বেকার ছিল। ব্যবসার কথা বলে ১০ লাখ টাকা যৌতুক চায়। এই টাকা না পেয়ে সে মুনাকে হ/ত্যার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার আগের দিন ৩০ আগস্ট মুনা আমাদের অন্য বোন তরন্নুম ঝিলিককে ফোনে জানায়, তার শাশুড়ি শানিমা বেগম তাকে অনেক গালিগালাজ করছে।
সুমন কোথায়
মাসুমা বলেন, মুনার মৃ/ত্যুর পর সুমন হাসপাতাল ছেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা তিন ঘণ্টা লা/শ নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করেছি। পরে লা/শ নিয়ে আসি।
মাসুমা বলেন, সুমন মুনার জানাজায় হাজির হলেও দ্রুত চলে যায়। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সুমনের কোনো খবর নেই।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে সুমন দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যকে বলেন, এগুলো ষ/ড়যন্ত্র।
এ ঘটনা কীভাবে ঘটল জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে ফোন কেটে দেন।
কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহিদুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।
প্রসঙ্গত, ওই শিক্ষিকে পরিকল্পতি ভাবে হ/ত্যার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। তবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বলে জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।