প্রবীণ অভিনেতা ও নাট্য ব্যক্তিত্ব ড. এনামুল হক ৭৮ বছর বয়সে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। অভিনেতাদের ইক্যুইটির সচিব মো. নাসিম গনমাধ্যমকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন। আজ দুপুরে এই প্রবীণ অভিনেতা অসুস্থ হয়ে পড়েন বেইলি রোডে তার নিজ বাসায়। এরপর তাকে রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃ’/ত বলে ঘোষণা করেন। তার দেহ রাখা হয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে। তার শেষকৃত্যের ব্যাপারে এই খবর লেখা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই একুশে পদক বিজয়ী, নাট্যকার, পরিচালক এবং শিক্ষক, তার বাসায় হৃদ স্পন্দন বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন বলে জানিয়েছেন হৃদি হক।
দুপুরে খাওয়ার পর চেয়ারে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সে অবস্থাতেই না ফেরার দেশে চলে যান ড. ইনামুল হক। সোমবার নাট্যজন ইনামুল হকের প্রয়ানে যেন আকস্মিক শো’কের পর্দায় ছেয়ে গেল শহর। দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় ড.ইনামুল হকের মেয়ে জামাই লিটু আনামের। তিনি বলেন, ‘বেইলি রোডের বাসায় দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে চেয়ারে বসে ছিলেন উনি। সে অবস্থাতেই তিনি চলে যান। একদম ভালো ছিলেন তিনি, কিছুই হয়নি।’
স্ত্রী লাকি ইনাম স্বামীকে চেয়ারে বসে থাকা স্বামীকে ডাকছিলেন। তখনই বোঝেন ভ’/য়’/ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেছে, ইনামুল হক আর নেই। প্রিয় মানুষ, দীর্ঘ পথের সারথী চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। লিটু আনাম বলেন, ‘উনার স্ত্রী মানে লাকি ইনাম গিয়ে ডাকছিলেন, কিন্তু উনি সাড়া দিচ্ছিলেন না। এরপরে দ্রুত নিকটস্ত একজন চিকিৎসককে ডেকে আনা হয়, তখনও পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপরে দ্রুত ইসলামিয়া হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে ডাক্তাররা জানান উনি নেই।’
লিটু আনাম একটি অধ্যায়ের নাম, এই দেশের নাট্য জগতের নক্ষত্রের নাম, তাঁর এমন চলে যাওয়ায় ব্যথিত দেশের নাট্যজগত, ব্যথিত সাধারণ দর্শকেরা, সাধারণ মানুষেরা- এমনটাই মনে করছেন এই সময়ের নাট্য চর্চায় যারা যুক্ত রয়েছেন।
অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘ড.ইনামুল হকদের মতো মানুষরা ছিল বলেই আজ বাংলাদেশের নাট্যজগত রয়েছে। বাংলাদেশের নাট্য চর্চার যে ভিত্তি তা উনারাই তৈরি করেছেন। টেলিভিশন, মঞ্চ উনাদের হাত ধরেই যাত্রা শুরু করেছিল বলেই পরম্পরায় আজ এখানে এসেছে। তিনি এমন পর্যায়ের, এমন মাপের মানুষ, তাঁকে নিয়ে আমার বলার মতো কিছু নেই। শুধু বলবো নাট্য জগতের একটি বড় অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো, একটি নক্ষত্র খসে গেল।’
১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী সদরের মটবী এলাকায় জন্ম হয় তার। বাবার নাম ওবায়দুল হক ও মা রাজিয়া খাতুন। ড. ইনামুল হকের পুরো পরিবারই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তার দাম্পত্য সঙ্গী বরেণ্য নাট্যজন লাকী ইনাম। তাদের সংসারে দুই মেয়ে হৃদি হক (স্বামী লিটু আনাম) আর প্রৈতি হক (স্বামী সাজু খাদেম)। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই দিন কাটছিল তার।
এনামুল হক ১৯৬৮ সালে মোস্তফা মনোয়ার প্রযোজিত টেলিফিকশন “মুখরা রমণী বশীকরণ” -এ অভিনয়ের মাধ্যমে নাটকে নিজেকে আত্মপ্র’কাশ করেছিলেন। তিনি একই বছর লেখক হিসেবে বিভিন্ণ ধরনের লেখে শুরু করেছিলেন। আজ পর্যন্ত, তিনি ৬০ টিরো বেশি টেলিভিশন নাটক রচনা করেছেন। ফেনী সদরের মাতাবী এলাকায় ১৯৪৩ সালের ১৯ শে মে জন্মগ্রহণ করেন এবং ওবায়দুল হক ও রাজিয়া খাতুনের ছেলে ড. এনামুল হক ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স, এমএসসি সম্পন্ন করেন। পরে তিনি ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ১৫ বছর ধরে তার শিক্ষকতার সময় ড. এনামুল হক রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং দুই বছর প্রকৌশল বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নটরডেম কলেজে পড়ার সময় তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন।