গেলো বেশ কিছু দিন আগে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়। আর ওই ভিডিওতে দেখা যায় ছাত্রলীগের এক নেতা দুধ দিয়ে গোসল করে নিজেকে পবিত্র করে ছেড়ে দিয়েছেন ছাত্র লীগের রাজনীতি। আর এই ভিডিও মুহূর্তেই হয়ে যায় ভাইরাল। এ দিকে এবার জানা গেলো নতুন একটি খবর।কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় সেই দুধ দিয়ে গোসল করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ছাত্রলীগ নেতা আরমিন আহমেদকে ”কু”পি”য়ে’ছে” ‘দু”র্বৃ’ত্ত’রা।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার মির্জাপুর বাইপাস সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
আরমিন আহমেদ উপজেলা সদরের বড়বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ১নং উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
পাকুন্দিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মজিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরমিনের সঙ্গে থাকা মুন্না নামে এক ব্যক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই তার সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কারা ‘হা’ম’লা’ করেছে সে বিষয়ে পুলিশ কিছু বলতে পারেনি।
আরমিনের ভাতিজা নাইমুল ইসলাম রনি জানান, রাত ১০টার দিকে তার চাচা দুইটি মোটরসাইকেলে চার বন্ধুকে নিয়ে থানাঘাট এলাকার একটি হোটেলে খেতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে মির্জাপুর বাইপাস সড়কে পৌঁছালে দুটি মা’ইক্রোবা’সে ১৫ থেকে ২০ যুবক তাদের চলাচল বন্ধ করে তাদের ওপর ”হা’ম”লা’ চালায়।
সঙ্গে থাকা অন্যরা দৌড়ে গেলে আরমিন পড়ে যায়। এরপর হা’ম’লা’কা’রী’দে’র একজন ‘মা’থা’য় আ’ঘা’ত করে। পরে চলে যায়।
রনি বলেন, ‘চাচা (আরমিন) তাদের চিনতে পেরেছেন। জ্ঞান ফিরলে নাম জানা যাবে।
কারা তাকে আ’ক্রম’ণ করতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তার সাথে ছিলাম না। তবে নবগঠিত কমিটির নেতা-কর্মীরা তা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ দুধ দিয়ে গোসল করার পর সবাই তার উপর রাগ করে।
পাকুন্দিয়া ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি আপনার মাধ্যমে এটি সম্পর্কে শুনেছি।
উল্লেখ্য, ১২ বছর পর গত ৫ অক্টোবর নতুন কমিটি পায় পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ ওমান খান স্বাক্ষরিত ১৯ সদস্য বিশিষ্ট পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নাজমুল আলমকে সভাপতি ও মোঃ তোফায়েল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটিতে আরমিনকে ১ নম্বর সহসভাপতি করা হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ছিলেন। কাঙ্খিত পদ না পেয়ে গত ৬ অক্টোবর রাতে ক্ষোভে দুধে গোসল করে কলঙ্কমুক্তির দাবি জানান তিনি।
আরমিন তার ফেসবুকে ২২ সেকেন্ডের এই ঝরনার ভিডিও পোস্ট করেছেন। ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, এক শিশু ছাত্রলীগ নেতার মাথায় পুরো দুধ ঢেলে দেয় এবং সারা শরীরে দাগ দেয়।
যিনি ভিডিওটি ধারণ করছেন তিনি প্রশ্ন করেন, আরও রাজনীতি করবা?
এ সময় হাত নেড়ে না করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
অভিমানী আরমিন গত অক্টোবরে বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলাম। এ ছাড়া অন্য পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে আমি সিনিয়র। তবে বুধবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উমান খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাজমুল আলমকে সভাপতি ও তোফায়েল আহমেদ তুহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটাই দেখছি। এই কমিটিতে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা আমার জুনিয়র। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে জুনিয়রদের রেখে আমাকে ১ নম্বর সহসভাপতি করা হয়েছে।
তাকে সম্মান না দিয়ে অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, “আমার ১২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ৭টি মামলার আসামি হিসেবে দুবার কারাবরণ করেছি। এইচএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত জেলে বসেছি। কিন্তু আমাকে মূল্যায়ন না করে জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা ছেলেদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাই আমি নিজেকে পরিষ্কার করার জন্য দুধ দিয়ে গোসল করলাম।
রাজনীতিতে থাকছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতিতে ছিলাম, আছি, থাকবো। নিজেকে সান্ত্বনা দিতেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, এদিকে তার সাথে এমন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার কারনে বেশ হতাশ তার পরিবার ও তার এলাকাবাসী। তারা সকলেই জানাচ্ছেন মূলত ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কারণেই হয়তো তার বিরুদ্ধে কেউ বা করা মিটিয়েছে এই আক্রোশ।