বাংলাদেশের ব্যাপকহারে বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ কমে গেছে, যার কারণে সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েছে দেশটি। তবে এমন পরিস্থিতিতেও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে, যেটাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বিষয়। তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দিকে কয়েকটি নেতিবাচক দিকের কথা উল্লেখ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই জোটটি মনে করে বাংলাদেশ যদি শ্রম অধিকার এবং কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে তাহলে এখানে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এবং আরও কাজের সুযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, বাংলাদেশ এখনো কর ছাড়, শুল্ক নীতি, সংরক্ষণবাদ এবং বিদেশি মালিকানা বিনিয়োগের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত নয়। সম্প্রতি মিয়ানমারের উ’স/’কানিমূলক আচরণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
চার্লস হোয়াইটলি বলেন, বাংলাদেশের কিছু খাত এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বাণিজ্যসহ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে চাই। এখন অনেকটাই নির্ভর করছে বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর। কিন্তু বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাস্তবায়নে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বাংলাদেশ এখনও কর ছাড়, শুল্ক নীতি, সংরক্ষণবাদ ও বিদেশি মালিকানা বিনিয়োগের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত নয়। তবে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে এসব বাধা দূর করতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৬ সালে, জোটটি বাংলাদেশ যদি স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারলে শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা দেবে। চার্লস হোয়াইটলিও এমনটাই বলেন। তিনি বলেন, জিপিএস সুবিধা পেতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৩২টি কনভেনশন রয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক ইস্যুতে জাতিসংঘের সনদ যত দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবে, জিপিএস সুবিধা তত সহজ হবে। এর ফলে ২০২৯ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা শুল্ক ছাড় পাবেন।
চার্লস হোয়াইটলি আরও উল্লেখ করে বলেন যে, বিনিয়োগ, কাজের পরিবেশ এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যা নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। চার্লস হোয়াইটলি মনে করেন, মিয়ানমার থেকে আগত শরনার্থীদের প্রত্যাবাসন না হওয়া এবং মিয়ানমারের সাম্প্রতিক উ’/সকা’/নিমূলক আচরণ উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করবেন। এছাড়া নিরাপদ ও আইনি অভিবাসন নিশ্চিতকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইইউ ঢাকার সঙ্গে কাজ করবে বলে আশ্বাস দেন এই কূটনীতিক।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের কাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিভিন্ন দুর্নীতি শুল্কনীতি এবং শ্রম নীতিতে বেশ কিছু ঘাটতি থাকার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছে, যেটা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য একটি বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। এইসব বিষয় কাটিয়ে উঠতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে বাইরের দেশের বিনিয়োগ বাড়বে এবং অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্লেষকদের।