বর্তমান আধুনিক যুগে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আকাশ পথের কোনো বিকল্প দেখছে না যাত্রীরা। খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে রীতিমতো আনন্দিত বোধ করে থাকেন সকলেই। তবে মাঝে মধ্যেই সেই আকাশ পথে ঘটে থাকে নানা দুর্ঘটনা। আর সেই দুর্ঘটনা যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘটনা হয়, তাহলে তা কতই না নিকৃষ্ট।
আট বছরেরও বেশি আগে ২৩৯ যাত্রী নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০। এ নিয়ে সেই সময় নানা বিশ্লেষণ হলেও সম্প্রতি নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিপেনডেন্ট’ দাবি করেছে, বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি পাইলটরা ধ্বংস করেছে। বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া নতুন প্রমাণ পরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞরা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ যখন বোয়িং ৭৭৭ বিমানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা উঠে আসে। এটি ওই বিমান সংস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফ্লাইট এমএইচ-৩৭০। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়েছিল। আকাশে প্রায় ৩৮ মিনিটের মধ্যে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এর সাথে যোগাযোগ করেছিল। ওই সময় বিমানটি দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর দিয়ে উড়ছিল। কয়েক সেকেন্ড পরে, এটিসি বিমানের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে।
এক ঘণ্টা পর অবশ্য মালয়েশিয়ার সামরিক বাহিনীর রাডারে বিমানটি শনাক্ত করা হয়। কিন্তু সে সময় পরিকল্পনা মতো যাচ্ছিল না। পরিবর্তে, বিমানটি তার পরিকল্পিত গতিপথ থেকে পশ্চিমে বিচ্যুত হয়ে মালয় উপদ্বীপ এবং আন্দামান সাগর অতিক্রম করে।
সেনাবাহিনীর রাডার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ফ্লাইট এমএইচ-৩৭০। চিরতরে নিখোঁজ হয়ে যায়। বিমানটিতে চালকসহ ২২৭ জন যাত্রী এবং চালক মিলিয়ে ১২ জন কর্মী ছিলেন। তাদের মধ্যে ভারত থেকে আসা ৫ জন যাত্রী ছিলেন।
বিমানটির সন্ধানে মালয়েশিয়া সরকার দক্ষিণ চীন সাগর ও আন্দামান সাগরে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। তবে ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এর কিছু অংশ খুঁজে পাওয়া গেলেও অধিকাংশ ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বেসামরিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল অপারেশনটি কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল।
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিমানটির স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থার পরীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে বিমানটি দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হতে পারে। তবে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে কোনো যুক্তিসঙ্গত তত্ত্ব পাওয়া যায়নি।
আট বছর পর দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে নতুন করে দাবি করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিপেনডেন্ট’ দাবি করেছে, ২৫ দিন আগে মাদাগাস্কারে এক জেলে বাড়িতে ওই বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের ১টি দরজা পাওয়া গেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বোয়িং ৭৭৭-এর ল্যান্ডিং গিয়ার সমুদ্রে পড়ার সময় নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে কারণেই বিমানটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্লেইন গিবসন, ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার রিচার্ড গডফ্রে-র মতো ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এর ধ্বংসাবশেষের জন্য একজন আমেরিকান অনুসন্ধানকারী, দাবি করেছেন যে বিমানটি ইচ্ছাকৃতভাবে এর পাইলটদের দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের দরজা পরীক্ষা করলেই প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে বিমানটি ধ্বংস হয়েছে।
ব্রিটিশ প্রেস অনুসারে, ২০১৭ সালে, ল্যান্ডিং গিয়ার দরজাটি মাদাগাস্কারের উপকূলে তাতালি নামে একজন জেলে খুঁজে পেয়েছিলেন। ‘ফার্নান্দো’ নামক উপকূলীয় ঝড়ে মাদাগাস্কারের উপকূলে দরজাটি ভেসে গেছে।
তাতালির কোনো ধারণা ছিল না যে ল্যান্ডিং গিয়ার দরজাটি মালয়েশিয়ার বিমানের অংশ। জেলেটির স্ত্রী পাঁচ বছর ধরে এটিকে ওয়াশিং বোর্ড হিসেবে ব্যবহার করছিলেন।
“ল্যান্ডিং গিয়ারের দরজার চারপাশে ফাটল এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ইঙ্গিত করে যে প্লেনে অন্য যা কিছু ছিল, তা ধীরে ধীরে সমুদ্রে ডুবেনি,” গডফ্রে ব্রিটিশ মিডিয়াকে বলেছেন। বরং প্রচণ্ড গতিতে বিমানটি পানিতে আছড়ে পড়ে। এবং এটি এমনভাবে করা হয়েছিল যে প্লেনটিকে যতটা সম্ভব টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়েছিল।
গডফ্রে এবং গিবসন কেন দুর্ঘটনা সম্পর্কে এমন একটি তত্ত্ব দিলেন? তারা বলেছে যে ল্যান্ডিং গিয়ারের দরজায় চারটি আধা-সমান্তরাল চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা গডফ্রেড বিশ্বাস করেছিল যে বিমানের দুটি ইঞ্জিন দুর্ঘটনার সময় ছিঁড়ে গিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, অত্যন্ত বেশি গতির প্রভাবে বিমানটিকে যত দ্রুত সম্ভব টুকরো টুকরো করা হয়েছিল। অন্যদিকে দুর্ঘটনার প্রমাণ লুকোনোর যে চেষ্টা করা হয়েছিল, তা ল্যান্ডিং গিয়ারটিকে পরীক্ষা করলে স্পষ্ট বোঝা যায়।
এদিকে দেশটির এক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই বিমান দুর্ঘটনায় তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে আর কারো হাত রয়েছে কিনা, তাও খুতিয়ে দেখা হচ্ছে।