খোকন ওরফে খোকন নন্দি নামের এক ব্যাক্তি প্রয়াত হয়েছেন প্রায় আট বছর হয়ে গেছে। বার্ধক্যজনিত কারনে তিনি ঢাকার বার্ডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন। প্রয়ানকালে তার দুইজন স্ত্রী ছিলেন। যেহেতু প্রয়াত ব্যাক্তির দুই স্ত্রী ছিলেন তাই তার নিথরদেহ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। যা এখন আইনি জালে ঘুরপাক খাচ্ছে।
স্বামীর নিথরদেহ মর্গের ফ্রিজারে আট বছর হয়ে গেছে। সাত-আট মাস আগে একবার গিয়েছিলাম, শরীর শুকিয়ে গেছে। বিকৃত ও ধ্বংস। যাও, কয়দিন ভালো থাকবে? স্বামীর দুই স্ত্রীর মধ্যে যে একজনকে পাওয়া যায় না কেন, এখন শরীরের নড়াচড়া হওয়া জরুরি। কথাগুলো বলেছেন হাবিবা আক্তার খানম। দুই ধর্মের দুই স্ত্রী তাদের স্বামীর নিথরদেহ দাবি করেছেন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গেলেও স্বামী খোকন ওরফে খোকন নন্দী ওরফে খোকন চৌধুরী ওরফে খোকা চৌধুরী ওরফে রাজীব চৌধুরীর নিথরদেহ আট বছর ধরে ফ্রিজারে রয়েছে। হাবিবা খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর নাম মীরা নন্দী। হাবিবা আক্তার বলেন, আমি নিজেও বুড়ো হয়ে গেছি। আমি চাই আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি হোক, কিন্তু আমি চাই না, অন্য পক্ষ মামলার নিষ্পত্তি করতে চায় না। তাই কত দিন স্বামীর নিথরদেহ ফ্রিজে থাকবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
খোকনের বয়স প্রায় ৭০ বছর, তাকে ২০১৪ সালের ১৫ জুন বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই বছরের ২৬ জুন তিনি প্রয়াত হন। প্রথমে তার নিথরদেহ বারডেমের ফ্রিজারে রাখা হয়। লাশ রাখার দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা না থাকায় বারডেম কর্তৃপক্ষ আদালতকে অবহিত করে আদালতে আপিল করেন। একই বছরের ২৩ অক্টোবর সহকারী জজ আদালত (সিভিল ২৫২/১৪ ঢাকা) নিথরদেহ বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। এরপর ১৫ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে খোকনের নিথরদেহ নেওয়া হয়। খোকন কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন তা এখনো ঠিক করেনি আদালত। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মরদেহ স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে নিথরদেহ রাখার জন্য বিল হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, যে স্ত্রী তার স্বামীর নিথরদেহ পাবেন তাকে এই বিল পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সহকারী সেকান্দার জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডিপ ফ্রিজারে শুকিয়ে যাচ্ছে খোকন নন্দীর নিথরদেহ। এর আগেও কয়েকবার ফ্রিজ ভেঙেছে। এরপর শরীর সংরক্ষণে জটিলতা দেখা দেয়। তারা নিথরদেহ বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। বারডেম জেনারেল হাসপাতালে খোকন নন্দী প্রয়াত যাওয়ার পর থেকেই জটিলতা শুরু হয়। তার দুই স্ত্রী তাদের নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী দাহ বা দাফন চান। নিথরদেহ নিয়ে লড়াই শুরু হলে তা রমনা থানা ও আদালত পর্যন্ত পৌঁছায়। হাবিবা আক্তার (৬৫) একজন অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। তিনি বলেন, খোকন ১৯৮০ সালের ২ এপ্রিল প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামার মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালের ১৫ জুলাই তাকে বিয়ে করেন। তিনি দাবি করেন, প্রয়ানের আগে খোকন হাবিবার সঙ্গে থাকতেন।
খোকন নন্দীর ভাই বাবুল নন্দী গনমাধ্যমকে বলেন, তার ভাইয়ের প্রথম স্ত্রী মীরা নন্দী। মীরা ও তার সন্তানেরা সবসময় তাদের সাথে যোগাযোগ রাখে। খোকন তার সম্পত্তি কাউকে লিখে দেননি। তাই সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। আপাতত ভাইয়ের একমাত্র ছেলে সম্পত্তির হিসাব রাখছেন। বাবুল দাবি করেন, ভাই মারা যাওয়ার পর স্ত্রী মীরা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী নিথরদেহ নিতে চাইলে শুরু হয় উত্তেজনা। মীরার আইনজীবী কিশোর রঞ্জন মণ্ডল গনমাধ্যমকে বলেন, সব নথিতে খোকন নন্দীর নাম একই। যাইহোক, খোকন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হলফনামার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এমন একটি নথি আদালতে জমা দিয়েছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবা। কাগজটিও জাল হতে পারে। হাইকোর্টে সংশোধিত। রিভিশন শোনা হবে। তবে খুব দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলা যায়।
উল্লেখ্য, প্রয়াত খোকন তার প্রয়ানকালে দুই জন স্ত্রী ছিলেন, এবং দুইজনই দুই ধর্মের অবলম্বি হওয়া স্বামীর নিথর দেহ দাহ না দাফন করা হবে এনিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। ফলে এ নিয়ে খোকনের প্রয়ানের পরে নিথর দেহ হাসপাতাল থেকে হস্তান্তর নিয়ে দেখা দেয় নানান আইনি জটিলতা। সেই আইনি জটিলতা কাটাতে কাটাতে প্রায় ৮ বছর পার হয়ে গেল এখনও তার কোন সমাধান হয়নি। এদিকে নিথর দেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা নিয়ে অনেক টাকা বিল জমা হয়ে গেছে।