রাজশাহীতে অজ্ঞাত ভাইরাসে দুই বোনের মৃত্যুর পর তাদের বাবা-মাকেও আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। কাজের মেয়ের আনা গাছের বরই খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে দুই বোন।
চিকিত্সকরা বিশ্বাস করেন যে গাছ থেকে না ধুয়ে বরই খেলে নিপাহ ভাইরাস তাদের শরীরে আক্রমণ করতে পারে। এবং এটি তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
দুই বোন মুনতাহা মারিশা (২), মুফতাউল মাশিয়া (৫)। তাদের বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। মা পলি খাতুন (৩০) একজন গৃহিণী।
এই দুই সন্তানের বাবার বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদা ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকতেন।
রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আইসোলেশন সেন্টারে থাকা মঞ্জুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুন জানান, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ওই কোয়ার্টারের কাজের মেয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই তুলে দেয়। দুই মেয়েকে খেতে। মারিশা এবং মাশিয়া সেই বরইগুলো না ধুয়ে খেয়েছে। পরদিন বুধবার বিকেলে মারিশার মেয়ের জ্বর হয়। এর পর বমি শুরু হয়। এরপর মেয়েকে নিয়ে মাইক্রোবাসে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন তারা। মারিশাও মাইক্রোবাথে বুকের দুধ খাওয়ায়। নগরীতে প্রবেশের আগেই কাটাখালী এলাকায় মারা যান মারিশা। সিএমএইচে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দুর্গাপুরে দাফন করা হয়।
এরপর শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুর্গাপুর বাড়িতে মাশিয়ারও জ্বর হয়। বমি শুরু হয়। দ্রুত তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহীর সিএমএইচে নেওয়া হয়। রাতে মাশিয়ারও সারা শরীরে ছোট ছোট কালো দাগ পড়তে থাকে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত আইসিইউতে ভর্তি করেন। পরের শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যান।
এদিকে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে দুই শিশুর বাবা-মাকে হাসপাতাল থেকে বের হতে দেননি চিকিৎসকরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। আর বিকেলে মাশিয়ার মরদেহ স্বজনদের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠানো হয়। পরে সন্ধ্যায় দুর্গাপুর উপজেলার গ্রামের বাড়িতে লাশ দাফন করা হয়। গত বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও একই স্থানে দাফন করা হয়।
রামেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, শিশু দুটি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, তারা খেজুরের রস খাননি। কিন্তু সে বরই না ধুয়ে খেয়েছে। এটি নিপাহ ভাইরাস বা অন্য কোনো ভাইরাসের কারণে হতে পারে। এটি আসলে কী তা জানতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা ও তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রোববার প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।