বাংলাদেশ পুলিশের সব থেকে বড় পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন ড. বেনজির আহমেদ। পুলিশের আইজিপি হওয়ার আগে তিনি ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক। আর সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে করা বেশ কিছু দুঃসাহসিক কাজের কথা তুলে ধরলেন সম্প্রতি।
যারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে সমাজের সহজ পথে ফিরেছেন তাদের জীবনে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘তখন যারা (র্যাবে) কাজ করত তাদের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে ছিল। এটা করতে আমাদের অভিনব কিছু করতে হয়েছিল। প্রকাশ্যে বলার সময় এখনো আসেনি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার লং বিচ হোটেলে আয়োজিত ‘নবজাগরণ’ শীর্ষক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।
আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে ধর্মীয় জঙ্গিরা নিজ উদ্যোগে এবং স্বেচ্ছায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আমরা এমন ঘটনাও দেখেছি যেখানে তার ছেলে নিজে এসে তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করেছে। একজন জঙ্গি হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। হলি আর্টিসান হামলার সময় র্যাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদেরও আমরা সমাজে পুনর্বাসন করেছি।আজ আমি বলি পুনর্বাসন ব্যবস্থা তখন এত সহজ ছিল না।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সুন্দরবনের ৪০০ বছরের পুরনো জলদস্যুতা সমস্যা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। কিন্তু তা জোরপূর্বক নয়, সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে। জলদস্যুদের আত্মসমর্পণেই ক্ষান্ত হয়নি র্যাব। র্যাব এখনও প্রায় ৩০০ জলদস্যুকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে।এই জলদস্যুরা এখন সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।’
পুলিশ প্রধান বলেন, ‘কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। মূলত সমাজ, পরিবেশ ও পরিস্থিতি তাকে অপরাধী করে তোলে। এমন সব সামাজিক অবস্থা যা একজন মানুষকে বাধ্য করে শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তবে আগে থেকে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ধীরে ধীরে সমাজে অপরাধ কমানো সম্ভব। আমরা একটি শূন্য-অপরাধ সমাজ গঠনের চেষ্টা করতে পারি।”
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের দেশ এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, দক্ষ জনসংখ্যা তৈরি করা জরুরি। এসএসসি, এইচএসসি এবং বিএ পাসের কারণে দক্ষ জনসংখ্যা তৈরি হয় না। তাদের মধ্যে, একটি অংশ সিভিল সার্ভিস অফিসার হতে পারে, একটি অংশ হবে কেরানি এবং বাকিরা বেকার। এ জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। র্যাব আমাদের দেখিয়েছে কিভাবে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা যায় এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। আরেকটি কথা প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, উদ্যোক্তা থাকলে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।
র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আখতার হোসেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রমুখ।
‘সে নো টু ক্রাইম’ স্লোগান নিয়ে সর্বশেষ অপরাধ প্রতিরোধ কৌশলের আওতায় নতুন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
নতুন কর্মসূচি ‘নবজাগরণ’-এর আওতায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা ৩৬ যুবককে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছে র্যাব। এর মধ্যে হোটেল সার্ভিস বয় ৬, সার্ফিং ৫, ট্যুরিস্ট গাইড প্রশিক্ষণ ৫, ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণ ৫, সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ ১০, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ৫। আজ তাদের হাতে সনদ তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ দিকে সদ্য আমেরিকা সফর করে এসেছেন পুলিশের আইজিপি।জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের অনুষ্ঠানে যোগদান করতেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। এরপরই দেশের বিভিন্ন কর্মকান্ড সামলাচ্ছেন নিজ হাতে।