বাংলাদেশে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল রয়েছে। দেশ স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে এই সকল রাজনৈতিক দল থেকে দেশের সরকার গঠিত হয়ে থাকে। বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয় লাভ করেন ভোলার লালমোহন উপজেলার ৭নং পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ। এরপর তিনি একটানা দীর্ঘ ১৮ ভছর কোন নির্বাচন ছাড়াই সেই দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সম্প্রতি তার পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করে উচ্চ আদালত।
বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠিত ভোটে জয়ী হওয়ার পরে আর কোনো নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ভোলার লালমোহন উপজেলার ৭নং পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ। এরই মধ্যে তিনি ২০১৯ সালে ২২ সেপ্টেম্বর অনুমতি ছাড়া ভারতের কলকাতা গিয়ে দেশে ফেরেন ওই বছরের ৬ অক্টোবর (ইমিগ্রেশন বিশেষ পুলিশের শাখার তথ্য অনুযায়ী)। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি বিধান) বাৎসরিক সভা ও মাসিক সভা করার কথা থাকলেও তা নিয়মিত না করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি ওই চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করেছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিব। সেই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন সেই বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রুল জারির পাশাপাশি বহিষ্কারাদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আজ রিটটি খারিজ করে দেন আদালত। ফলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চেয়ারম্যানের বহিষ্কার আদেশ বহাল থাকলো হাইকোর্টেও। তাতে ১৮ বছর পরে চেয়ারম্যানের পদ হারালেন আবু ইউসুফ।
জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন। আদালতে আজ প্যানেল চেয়ারম্যানের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবির। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মনির হোসেন হাওলাদার। বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান আবু ইউসুফের রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। এর ফলে তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে জানান আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবির। প্যানেল চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের অপর আইনজীবী মো. মনির হোসেন বলেন, আমরা আদালতের শুনানিতে বলেছি যে, ওই ইউনিয়ন পরিষদে ২০০৩ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তার পরে এখন পর্যন্ত আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি এবং চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্তে ইতোমধ্যে প্রমাণিতও হয়েছে। এসব বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তার বহিষ্কারাদেশ নিয়ে করা রিট খারিজ করে রায় দেন। এই রায়ের ফলে চেয়ারম্যান ওই পদে আর বহাল থাকলো না এবং চেয়ারম্যান এখন থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের আইন অনুযায়ী আর কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
দীর্ঘদিন ওই ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন না হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৩ সালে চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সেখানে কচুয়ার চর ইউপির এক ভোটারকে চর উমেদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রিট করা হয়। সেই রিটের শুনানি নিয়ে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। কিন্তু সেটির কোনো চূড়ান্ত রায় না হওয়ায় নির্বাচন আয়োজনের মেয়াদ শেষ হতে থাকে আর কেটে যায় বছরের পর। সেখানে তফসিল দেওয়ার পর নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে-পরে বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে ১০ থেকে ১২টি রিট করেন ভোটাররা। সংশ্লিষ্ট এই কোর্টেই চার থেকে পাঁচটি রিট করা হয়। ওই সব রিট পেন্ডিং থাকার কারণে স্থানীয় সরকার থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান করেনি। আইনজীবী মনির হোসেন আরও বলেন, এর মধ্যে ওই চেয়ারম্যানের অনিয়ম নিয়ে তাকে বহিষ্কার করে এক ওয়ার্ড মেম্বারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আবু ইউসুফ তার চেয়ারম্যান পদ ফিরে পেতে হাইকোর্টে আসেন এবং তিনি রিটটি করেন। ওই রিটের জারি করা রুলের পক্ষভুক্ত হন প্যানেল চেয়ারম্যান (ওয়ার্ড মেম্বার) আলমগীর হোসেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত রিটটি খারিজ করে দিলেন। ফলে আবু ইউসুফের চেয়ারম্যান পদ বা ক্ষমতা আর থাকলো না।
পদ হারানোর পর থেকে চেয়ারম্যান আবু ইউসুফের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বহু দুরভিসন্ধি করে চেয়ারম্যান পদ দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে দখল করে রেখেছিলেন। তবে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় দীর্ঘ ১৮ বছরের দুঃশাসনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এখন খুব দ্রুত ইউনিয়নটিতে নির্বাচন দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিরা।