গত ৬ আগস্ট (শনিবার) রাতে সরকার অনেকটা হঠাৎ করে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। তারপর থেকে দেশজুড়ে বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। কারণ একবারে ব্যাপকহারে দাম বাড়ানোর বিষয়টি সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারছে না। এদিকে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কারণ তুলে ধরছে। এবার জ্বালানি তেলের বৃদ্ধির কারণ জানালেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার দাম বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে আবারও দাম সমন্বয় করবে সরকার। রোববার সকালে নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সৃষ্ট সংকটের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, ফলে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেখানে বিপিসিকে লোকসান গুনতে হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের দাম বেশি থাকায় চোরাচালানের ঝুঁকি ছিল। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিপিসির ক্ষতি হয়েছে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা, এ প্রেক্ষাপটে সরকার দাম সমন্বয় করতে বাধ্য হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে জ্বালানি তেলের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, মিয়ানমারে ডিজেলের লিটার প্রতি মূল্য ১১২ টাকা ৫৬ পয়সা, ভারতে ১১৪ টাকা, শ্রীলঙ্কায় ১১৭ টাকা ৪৯ পয়সা, আরব আমিরাতে ১২২ টাকা ৮০ পয়সা, নেপালে ১২৭ টাকা ৮২ পয়সা, সিঙ্গাপুরে ১৮৯ টাকা ৭৮ পয়সা এবং হংকং-এ ২৬০ টাকা ৭৫ পয়সা।
তিনি বলেন, সরকার এর আগে ৪ নভেম্বর দাম সমন্বয় করেছিল, তার আগে ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ তারিখে আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম কমিয়েছিল। ভবিষ্যতেও বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশীয় বাজারে দাম কমিয়ে দাম সমন্বয় করা হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা সত্য, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে প্রভাব ফেলবে। সরকার সক্রিয়ভাবে এই বিষয়টি বিবেচনা করছে এবং নেতিবাচক প্রভাব ন্যূনতম রাখার চেষ্টা করছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান, কৃষি উৎপাদনসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের মতে, শীঘ্রই জ্বালানির দাম স্থিতিশীল হতে শুরু করবে, সেটা আমাদের জন্য আশার বার্তা বয়ে আনবে।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে শনিবার বিআরটিএতে পরিবহন মালিক, শ্রমিক সংগঠন ও স্টেকহোল্ডারদের বৈঠকে মন্ত্রণালয় সচিব ও বিআরটিএর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া সমন্বয়ের জন্য কথা বলেছেন।
কোনো পরিবহন সমন্বিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশি”য়ারি দেন মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শুধুমাত্র পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে না, যার প্রভাব পড়বে সমস্ত অর্থনীতিতে। একে দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। তারা সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। তার ওপর জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সকল ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। যেটা সর্বস্তরের মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবেও অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।