মানুষ হলো মরণশীল প্রাণী। প্রয়ান অবধারিত। প্রয়ান হবার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যেকোনো কারণে ঘটতে পারে মানুষের প্রয়ান। স্বাভাবিক প্রয়ান ও প্রাণনাশ এ দুটোর মধ্যে রয়েছে পার্থক্য যদিও এটা সত্য যে প্রাণনাশ করুক কিংবা স্বাভাবিকভাবে প্রয়াত হোক মূলত দুক্ষেত্রেই অবস্থা একই হয়। কিন্তু প্রাণনাশ করে সাপের কামড়ে প্রয়াত বলে দাফন করাটা আসলেই খুব দুখজনক একটি ব্যাপার। সম্প্রতি জানা গেল ঠিক এমনই একটি ঘটনা। দাফনের সময় কানে-মাথায় পিছনে রক্ত, প্রাণনাশ সন্দেহে নিথরদেহ নিয়ে গেল পুলিশ।
ঝিনাইদহের সদর উপজেলায় বদিউজ্জামান অপো (৫০) নামে এক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের রহস্যজনক প্রয়ান হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সাপের কামড়ে প্রয়ান বলে জানা গেলে রোববার নিথরদেহ দাফন করা হচ্ছে। এ সময় প্রয়াতের কান ও মাথার পেছন দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ বদিউজ্জামান অপোর নিথরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহ উপজেলার এস্তেফাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রয়াত অপো পোড়াহাটি ইউনিয়নের এস্তেফাপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম লতার ছেলে, মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামান। শনিবার রাতে প্রথমে তাকে সাপে কামড়েছে বলে জানা গেছে। মধ্যরাতে অজ্ঞাত কয়েকজন যুবক বদিউজ্জামান অপোর বড় মেয়ে চৈতিকে ফোন করে জানায়, তার বাবাকে সাপে কামড়েছে। খবর পেয়ে তার মেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে অজ্ঞাত যুবকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে এবং ‘তোমরা আমার বাবার প্রাণনাশ করেছ’ বলে। এর আগে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক প্রয়াত ঘোষণা করেন।
পরে এই রহস্যজনক প্রয়ানের পর রোববার বাদ জোহর জানাজা শেষে প্রধান শিক্ষকের নিথরদেহ দাফন করার সময় তার মাথা ও কানের পেছন থেকে রক্তক্ষরণ হলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দাফন বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশ নিথরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসে। প্রতিবেশীরা জানান, বদিউজ্জামানকে সাপে কামড়ালে তার মুখ লাল হয়ে যায় এবং মুখ কালো হয়ে যায়। তবে প্রয়াতের শরীরে সাপের কামড়ের কোনো চিহ্ন নেই। তাছাড়া নিজের পুকুরে দংশন করা ব্যক্তিকে পাশের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে কে নিয়ে গেল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এছাড়া রাতের আঁধারে তার স্বামীকে ডেকে মাদক সেবন করিয়ে পরিকল্পিতভাবে প্রাণনাশ করা হয় বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী পাখি খাতুন। ছোট ভাই কলেজ শিক্ষক খায়রুজ্জামান সাইফুল বলেন, আমরা হাসপাতালে পৌঁছে দেখি বড় ভাই প্রয়াত হয়েছে। ভাই কিভাবে প্রয়াত হয়েছে তা আমরা জানি না। অপরদিকে প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে বিরোধ চলছিল বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ। এই দ্বন্দ্বের কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার নামে অনেক মিথ্যা মামলাও করা হয়েছে। দীর্ঘ মামলা-মোকদ্দমা শেষে আদালতের আদেশে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের কথা ছিল বদিউজ্জামানের। গ্রামবাসীদের সন্দেহ, স্কুলে যোগ দেওয়ার আগে তাকে পরিকল্পিতভাবে প্রাণনাশ করা হয়ে থাকতে পারে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রয়ানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, বদিউজ্জামানের প্রয়ান রহস্যজনক। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল বলে শুনেছি। এ কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। ওসি জানান, আদালতের নির্দেশে সোমবার তার বিদ্যালয়ে যোগদানের কথা ছিল। আমরা স্কুলে যোগদানের একদিন আগে তার প্রয়ানকে রহস্য হিসেবে দেখছি এবং নিথরদেহের অবস্থার রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্ত শুরু করেছি। সোমবার দুপুরে নিথরদেশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তদন্ত প্রতিবেদন এলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।
প্রসঙ্গত, অপরাধ করে মানুষ চিন্তা করে যে সে খুব সহজেই পাড় পেয়ে যাবে কিন্তু অপরাধকারী জানেনা সে এক সময় না এক সময় ধরা খাবেই। এই পর্যন্ত কোনো অপরাধী অপরাধ করে বাঁচতে পারনি। স্কুল শিক্ষকের সাপের কামড়ে প্রয়ান হয়েছে বলে দাফন দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আর তখনি বেরিয়ে আসলো আসল রহস্য। নিথরদেহ দাহন দইতে না ডিয়ে পুলিশ নিয়ে গেল প্রয়ানের তদন্ত করার জন্য।