কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স ৩ মাস ২০ দিন পর খোলা হয়েছে। শনিবার সকাল ৮টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি বাক্স খোলা হয়। আটটি বাক্স থেকে মোট ১৬ বস্তা টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেই টাকা গণনা করা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া গেছে।
পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার সাড়ে ১৬ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। শনিবার (২ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে জেলা প্রশাসনের কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মসজিদ কমিটির কর্মকর্তাদের সামনে মসজিদের আটটি দানবাক্স খুলে তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা পাওয়া যায়। সকাল থেকে এসব টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রার গণনা শুরু হয়। পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, তিন মাস ২০ দিন পর মসজিদের বাক্স খোলা হয়েছে। আমরা দেড় বছর ধরে মসজিদের অনুদানের মূল অর্থ ব্যয় করছি না। এগুলো ব্যাংকে জমা হচ্ছে। যা দিয়ে এখানে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সে ৬০০০০ মুসল্লির একসঙ্গে প্রার্থনা করার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা থাকবে।
আধুনিক সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরও ব্যবস্থা থাকবে। প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পে খরচ হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। এরই মধ্যে আমরা একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারাই আমাদের শেষ পর্যন্ত বলে দেবে আসলে কত খরচ হবে। এরপর শুরু হবে কমপ্লেক্সের কাজ। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, অনুদানের টাকায় ইসলামী কমপ্লেক্সের পুরো ব্যয় বহন করা হবে। সকালে বুক খোলার পর টাকা বস্তায় ভরে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় গণনা শুরু হয়। দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনুদানের টাকা গুনছেন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। একের পর এক টাকার বস্তাগুলো তাদের সামনে ঢেলে দেওয়া হয়। এভাবেই চলে বস্তার পর বস্তা গণনার কাজ। একই সঙ্গে মেশিন দিয়ে টাকা পুনঃগণনা করেন ব্যাংকের লোকজন। কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনা তদারকি করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন আরেক দল পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। এটি দেখার মতো একটি দৃশ্য, তিনি বলেছিলেন। মানুষ এখানে কোটি কোটি টাকা দান করে তাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য। এছাড়াও রয়েছে স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, মসজিদে অনুদানের টাকা ব্যাংকে জমা আছে। ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে মসজিদের উন্নয়ন কাজ করা হয়। তা ছাড়া গরিব-অসহায় মানুষদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ক্যা// ন্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে মানবতার সেবায় ভূমিকা রেখে চলেছে মসজিদটি। এর আগে গত ১২ মার্চ দানবাক্সটি খোলা হয়। এ সময় বুকে পাওয়া যায় মোট তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এর আগেও গত বছরের ৬ নভেম্বর বাক্স খুলে তিন কোটি সাত লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, মসজিদকে ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। এছাড়া মসজিদের আয় বিভিন্ন সেবা খাতে সহায়তার জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে পাগলা মসজিদকে অন্যতম আধুনিক ইসলামী স্থাপত্য হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম।