Tuesday , December 31 2024
Breaking News
Home / Countrywide / দল গোছাতে কড়া সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, বাদ পড়বে অনেক নেতা

দল গোছাতে কড়া সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, বাদ পড়বে অনেক নেতা

সম্প্রতি, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন-বিরোধী নানা বক্তব্য দিয়েছেন। দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বর্তমানে আগামী নির্বাচন নিয়েই চিন্তিত এবং দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। এদিকে নির্বাচনের আগে, জোটের ঐক্য অটুট রাখার কথা ভাবছে বিএনপি। ( BNP) আর আওয়ামী লীগের ( Awami League ) জোট নিয়ে উদ্বেগ না থাকলেও, উদ্বেগের কারণ তৃণমূলের মতবিরোধীতা। নতুন বছরে তৃণমূলের সঙ্গে দলকে সুসংগঠিত করা এবং আন্দো”লন মোকাবেলা করে নির্বাচনী জটিলতা কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। তৃণমূলের রাজনৈতিক কোন্দল মেটাতে ও জোটের ঐক্য অটুট রাখতে মাঠে কাজ করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে সুসংগঠিত করার ওপর জোর দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের সংক্রমণ কমাতে মাঠে নেমেছেন আট বিভাগীয় আয়োজক দলের নেতারা। সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটির সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছে। এসব সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিয়ে নবীন-প্রবীণদের সমন্বয় করতে চায় আওয়ামী লীগ। ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী পুরনোদের বড় দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে জনপ্রিয় ও জনসমর্থক তরুণ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ( Awami League ) নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ভোটের আগে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে সম্মেলনের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাছাইয়ের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন তারা। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কোন্দল কমিয়ে দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার দিকে নজর দেন তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ( Awami League ) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান ( Muhammad Farooq Khan ) বলেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের কারণে সম্মেলন করতে না পারলেও আমরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। এতে জনগণের কাছে আমাদের অবস্থান আরও ভালো হয়েছে। কিন্তু সম্মেলন বিলম্বিত হওয়ায় এখন পর্যন্ত অনেক যোগ্য নেতা জায়গা পাননি। তবে এখন সম্মেলনের কাজের গতি অনেক বেড়েছে। ১০ দিনে অন্তত ২০টি জেলা-উপজেলা সম্মেলন হয়েছে। জেলা-উপজেলা সম্মেলনের তারিখও চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি আগস্টের আগেই অধিকাংশ (প্রায় সব) জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষ করতে পারব। এর মাধ্যমে আমরা আগামী জাতীয় সম্মেলন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নেব।

একই বিষয়ে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে তৃণমূল সম্মেলন করে সংগঠনকে নতুন করে সাজাতে চাই। আমরা তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে চাই। আমি শুধু নামকাওয়াস্তে সম্মেলন করতে চাই না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে আমরা সত্যিই তৃণমূল সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও জনমুখী করতে চাই। তিনি আরও বলেন, আমরা তৃণমূল নেতৃত্বে ত্যাগীদের নিয়ে আসতে চাই। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ ও পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদেরও আমি স্থান দিতে চাই। আমরা চাই তরুণ-প্রবীণ সমন্বয়ের নেতৃত্ব আসুক।

জানা গেছে, সারাদেশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা ও প্রায় সাড়ে ছয়শত উপজেলা কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় চল্লিশটি জেলা ও চার শতাধিক উপজেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। গত বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শুরুর পরিকল্পনা করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু তারপর থেমে গেল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আবারও প্রক্রিয়া দ্রুত করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশ অনুসরণ করবেন না।

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলা সম্মেলন হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটির তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা, থানা বা পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে। জেলা ও উপজেলায় প্রতিনিধি সম্মেলনও হচ্ছে। বিভাগীয় দলগুলোও নিয়মিত বৈঠক করছে। বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে বিভেদ কমিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে। সংঘা”ত টিকিয়ে রাখতে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশি”য়ারি দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, আশা করছি আগামী মে মাসের মধ্যে আমার দায়িত্বে থাকা (খুলনা) জেলা ও উপজেলার সম্মেলন শেষ করতে পারব। তিনি বলেন, ৩১ মার্চের মধ্যে ১২টি উপজেলার সম্মেলন শেষ হবে। এছাড়া ১২ মে মাগুরা, ১৪ মে মেহেরপুর, ১৫ মে চুয়াডাঙ্গা ও ১৬ মে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

সাম্প্রতিক জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে ক্লিন ইমেজের পুরনো ও অভিজ্ঞ নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিতর্কিতদের বদলে নতুন নেতৃত্ব আনা হচ্ছে। প্রায় সাত বছর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার পর ভেঙে দেওয়া কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিমকে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুককে; আবারও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

সাত বছর পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে এম হোসেন আলী হাসান ও আব্দুস সামাদ তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দলীয় কোন্দলের কারণে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবে মিল্লাতকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে হোসেন ও আবদুস সামাদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সম্মেলনের মাধ্যমে তারা স্বস্তি পেয়েছেন।

দীর্ঘ সাত বছর পর, ২০ ফেব্রুয়ারি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নতুন কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটির সভাপতি থাকা নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান।

একই অবস্থা উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলোতেও দেখা যায়। দীর্ঘ ৯ বছর পর পঞ্চগড় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. আমিরুল ইসলাম সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা সম্পাদক এবং সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান শেখ মিলন সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। সাম্প্রতিক অন্যান্য উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে নবীন-প্রবীণদের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, জেলা ও উপজেলা কমিটিতে তৃণমূল কর্মীদের আশা-আকাঙ্খাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কোনো বিতর্কিত, সুবিধাবাদী বা হাইব্রিড নেতাকে রাখা হয়নি। কঠিন সময়েও রাজনীতির ধারাবাহিকতা থেকে বিচ্যুত না হওয়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের শীর্ষ পদে রাখা হয়েছে। আমরা তৃণমূলের এসব সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে চেয়েছি। আমাদের নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সার্বিক নির্দেশনায় আমরা সহজে এসব করতে পেরেছি।

প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পদ্ধতিগতভাবে প্রতিবাদের জায়গা এখন অত্যন্ত সংকীর্ণ। তাই দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে তৃণমূলের সংগঠনকে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে নির্বাচনী প্রচারণা ও সংবাদ আদান-প্রদান গুরুত্বপূর্ণ। তাই আগামী নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল সংগঠনগুলোকে সুসংগঠিত করতে হবে।

About bisso Jit

Check Also

কোহিনূরের পর বিশ্বের সবচেয়ে দামি হীরা দরিয়া-ই-নূর বিদেশে পাচার করেছিল শেখ হাসিনা

ঢাকার নবাবি আমলের মহামূল্যবান হীরকখণ্ড ‘দরিয়া-ই-নূর’ নিয়ে রহস্য আজও অমীমাংসিত। ২০১৬ সালে সোনালী ব্যাংক সদরঘাট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *