জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে নানা তৎপরতা। বিএনপির সাবেক দুই নেতা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেবেন বলে আলোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন নিবন্ধিত দুটি দলেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির সাবেক নেতারা। বিশ্লেষকদের মতে, নানা নিষ্ক্রিয়তায় দলটি একদিকে যেমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে, অন্যদিকে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দলের সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে কি বিএনপি ভাঙছে?
সাধারণত নির্বাচন এলেই শুরু হয় ধ্বংসের খেলা। ছোট দলগুলো শক্তি প্রদর্শন করে বড় দলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করে। ডেবোরা একটি সুবিধাজনক স্থানে যেতে চায়। রাজনৈতিক কৌশলের বিষয়টি নতুন না হলেও নির্বাচনে এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এর বাইরে এক দল ছেড়ে অন্য দলে যাওয়া নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ।
সম্প্রতি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়া বিএনপির সাবেক দুই নেতাকে ঘিরে চলছে আলোচনা। তাদের একজন হলেন দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। গত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক এই সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়। আরেক ডাকসাইট কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী, যিনি একসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
বিএনপির এমন দলত্যাগের তালিকায় আরও কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
তৈমুর আলম ও সমশের মবিন চৌধুরী প্রয়াত নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিলেও বিএনপির কোনো দোষ নেই বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তারা আর বিএনপির সদস্য নন। তারা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে; আপনি অন্য দল করতে পারেন, তবে এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।
অন্যদিকে, আগস্টে নিবন্ধিত ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন’ নামে আরেকটি নতুন দলে যোগ দিচ্ছেন বিএনপির সাবেক নেতারা। বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে গুরুত্ব না দিলেও বিষয়গুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির ভেতরে সিদ্ধান্তহীনতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে অনেকেই দল ছাড়ছেন।
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অজয় দাস গুপ্ত বলেন, “তারা সব সময়ই বলে থাকেন যে কোনো মুহূর্তে সরকারকে উৎখাত করবেন। কিন্তু বাস্তবে যখন নেতাকর্মীরা তার কিছুই দেখছেন না, তখন তারা দলটিকে নেতিবাচক হিসেবে ভাবেন।’।
তারা মনে করেন, ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দল ও জোটকে বিপাকে ফেলার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সুযোগ নেবে এটাই স্বাভাবিক।
অজয় দাস গুপ্ত আরও বলেন, ‘নির্বাচনে নিজেদের ভালো করার জন্য ক্ষমতাসীন দল নিজেদের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে কাজ করবে। আর বিএনপি সেই সুযোগ দিচ্ছে, যা অন্যরা কাজে লাগাচ্ছে।
একই মত দিয়েছেন আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘যখন কেউ বিরোধী দলের সঙ্গে রাজনীতির মাঠে, নির্বাচনের মাঠে খেলবে, তখন সে কৌশল অবলম্বন করবে। এখানে কিছু ভুল নেই. তবে তা নৈতিক না অনৈতিক তা দেখতে হবে।
নির্বাচনী রাজনীতিতে ছোট দল ও জোটের প্রভাব থাকলেও সামগ্রিক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া কেউ তেমন গুরুত্ব বহন করে না বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।