খুলানা রেলওয়ে স্টেশনে ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টিকিট চোরাকারবারী ও বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ণ সরকারী সম্পদ লুট ও আত্মসাত করা অভিযোগ উঠেছে। ওই পাঁচ কর্মকর্তার সাথ স্টশন মাস্টারও জড়িত। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। যে বিষয়কে কেন্দ্র করে সংবাদ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়েছে। একই সঙ্গে খুলনা ( Khulna ) রেলওয়ের ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে রেলওয়ের সহকারী স্টেশন মাস্টার (সদ্য বদলি হওয়া) মোঃ জাকির হোসেন ( Md. Zakir Hossain ) অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্টেশন মাস্টার কেন মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করে জিডি করেছেন তা পরিষ্কার নয়। তিনিই টিকিট ইস্যু দেখাশোনা করেন। আমি অনেক দূর থেকে আসি, অফিস থেকেও বের হই না। তাহলে এই জিডি কেন? আমরা কোনো টিকিট কালোবাজারে জড়িত নই। তিনি বলেন, রেলের তেলে কিছু অর্থ বাজেট আছে। আমরা ডিউটি করার জন্য মাস্টারকে বলেছিলাম দুটি মোবাইল কিনতে। কিন্তু তিনি হঠাৎ করে আমাদের নামে জিডি করেন।
রেলের তেল, জিডি ও খুলনা স্টেশনের বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুললেন খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার। রোববার রাতে খুলনা রেলস্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
আমাদের স্টেশনে সম্প্রতি কালোবাজারি চক্র ধরা পড়েছে, তিনি বলেন। তুমি সচেতন. এটা রেল ও সরকারের জন্য দুঃখজনক বিষয়। অনেকদিন ধরেই কিছু জ্ঞানে আসছি। কিন্তু ঈদের আগে তারা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল বলে প্রশাসন ও আমাদের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু তেমন কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে যখন তারা আমাকে শারীরিকভাবে লা//ঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তারা আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে যাচ্ছে। তারা আমাকে কাউন্টারে টিকিট দিতে বাধ্য করে। তাদের অবৈধ দাবি মেনে নিতে পারিনি। এরপর সে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার পরিকল্পনা করে।
বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ডিটি স্যারকে জানানোর পর বললেন ঠিক আছে, আপনি একটা জিডি করে রাখুন। জিডির ভিত্তিতে পুলিশ প্রশাসন, ম্যাজিস্ট্রেটকে চিনি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা বদলি হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে বহুবার ভুল বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এতে খুলনার গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের কর্মচারীদের বদনাম হয়েছে। তারা বলে যে থলি থেকে মাস্টারের কালো বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে একটি টিকিট নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। এটা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়িত্ব। দুদক ৩১ বার অনুসন্ধান করে দেখেছে, মানিক চন্দ্র সরকারের বিলে ২ কাঠা জমি ছাড়া আর কোনো জমি নেই। আমার কথা হল, ১০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের কথা বলে লাভ কী? এটি গ্রহণ করা. কালো বিড়ালের ব্যাগ না থাকলে বের হবে কী করে? এক কেজি চাল থাকলে মাত্র এক কেজি বের হয়। ১০০ কোটি টাকা বড় ব্যাপার। Ederning কি বলছে? আমি জানতাম না যে ২০১৬ সালে পুরানো স্টেশনের লঞ্চ স্টেশন থেকে তেল চুরি হয়েছিল। পরে আমি কাগজপত্রে দেখেছি।
স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র আরও বলেন, স্টেশনে তেলের ব্যবস্থা আছে। শুধু খুলনায় নয়, সারাদেশে এই তেল পোড়ানোর নানা তৎপরতা রয়েছে। কালোবাজারির বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে তেল চুরির কথা বলছেন তিনি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়। এতে রেলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমি নিজে স্টেশনে কালোবাজারি ও দুর্নীতি করি না, কাউকে করতেও দেই না।
রেলের টিকিটের ক্ষেত্রে কোনো কোটা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু কর্মচারীদের টিকিট ২ শতাংশ। মানুষ আমার কাছে টিকিট নিতে আসে, আমি লিখি। কিন্তু সবাই টিকিট পায় না। টিকিট থাকলে কাউন্টার থেকে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমি টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত নই।
রেলের তেলের টাকার বিষয়ে স্টেশন মাস্টার বলেন, কেরোসিন তেলের জন্য আমাদের বাজেট আছে। আগে ৯ হাজারের বেশি বাজেট ছিল, এখন ১১ হাজারের বেশি বাজেট রয়েছে।
তেলের টাকা দিয়ে কী করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেলের টাকা বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করতে হবে। কোন মানুষকে বিভিন্ন কাজের জন্য টাকা দিতে হয় না। তেল হোক বা না হোক, অফিসের কাজেই খরচ হয়।
আমি নিজে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত নই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নিজেও কালোবাজারি করি না, অনুমতিও দিই না। খুলনা স্টেশনের সুনাম রয়েছে। টিকিট সবসময় কালোবাজারি হয় না, তবে ঈদের সময় এমনটি দেখা গেছে। উল্লেখ্য, কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট বিক্রির অভিযোগে গত ১৮ মে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে খুলনা রেলওয়ে থানায় জিডি করেন খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে টিকিট ব্ল্যাকমেইলের চার আসামিসহ মোট পাঁচজনকে বিভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের ট্রেন পরীক্ষক (টিএক্সআর) বায়তুল ইসলামকে চিলাহাটিতে, সহকারী স্টেশন মাস্টার মো: আশিক আহমেদকে রোহনপুর স্টেশনে, সহকারী স্টেশন মাস্টার মো: জাকির হোসেনকে মেহরা স্টেশনে, খালাসী মোল্লা পপিদুর রহমানকে পাবর্তিপুরে এবং খালাসিকে বদলি করা হয়েছে। জাফর।
উল্লেখ্য, দৈনিক হাজারো মানুষ রেল স্টশনে টিকিট ক্রয়ের জন্য আসে। তাদের মধ্যে অনেক লোক আসে যারা বিনা টিকিটে রেল ভ্রমন করে। অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যায়। বিশেষ করে ঈদের সময় এমন ঘটনা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এই সময় রেলওয়ে স্টশনে টিকিটের আকাল থাকায় টিকিট বেশি দামে বিক্রি করে কাউন্টারে কর্মরত কর্মকর্তারা এমনও অভিযোগ করেছেন অনেকেই।