Friday , December 27 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ত্রিভুজ প্রেমকাহিনীর নায়িকা সানজিদার আধিপত্যে ৩ জনকে মুক্ত করতে যেয়ে ধরা

ত্রিভুজ প্রেমকাহিনীর নায়িকা সানজিদার আধিপত্যে ৩ জনকে মুক্ত করতে যেয়ে ধরা

বিচারব্যবস্থা এবং প্রশাসনের অদ্ভুত মোড় নিয়ে ত্রিভুজ প্রেমকাহিনীর নায়িকা এডিসি সানজিদার আধিপত্য ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি যেন এক রুদ্ধশ্বাস উপন্যাস। বাস্তবিক ঘটনাগুলো গভীর রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের আলোকপাত করে, যেখানে আইনের শাসন এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ প্রকট হয়ে ওঠে।

২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। এই সময়কালে ঘটে যাওয়া দুটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড, যেখানে সবুজ মিয়া এবং শাহ-জাহান মিয়া নির্মমভাবে নিহত হন, সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে দায়ের করা মামলাগুলোতে প্রাথমিকভাবে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দায়ী করা হয়।

কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আরিফের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই মামলায় দায়ীদের তালিকায় আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম উঠে আসে। বিষয়টি যখন প্রকাশ পায়, তখন এডিসি সানজিদার নাম একটি বিতর্কিত ভূমিকা পালনকারী হিসেবে সামনে আসে।

অভিযোগ ওঠে, মো. জাহাঙ্গীর আরিফ এডিসি সানজিদার নির্দেশে কাজ করেছিলেন। যদিও সানজিদা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার তাঁর ছিল না। তবে এর আগেও তিনি বিভিন্ন আলোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। যেমন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বারডেম হাসপাতাল থেকে ছাত্রলীগের নেতাদের তুলে এনে মারধর করার ঘটনায় তিনি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।

ডিএমপি কমিশনার সানজিদার কাছে ব্যাখ্যা চাইলেও তাঁর দেওয়া তথ্য ডিএমপিকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এ থেকে বোঝা যায়, এই ঘটনায় প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং দায়সারা মনোভাব আরও স্পষ্ট হয়েছে।

মো. জাহাঙ্গীর আরিফের কার্যক্রমে একাধিক অসঙ্গতি লক্ষ করা গেছে। তিনি ডিবির কর্মকর্তা হয়েও নিজেকে নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক হিসেবে পরিচিতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ধরনের অনিয়মে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়াই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ঘটনা আইনের শাসনের জন্য হুমকি। তদন্তকারীদের সাক্ষ্য–স্মারকলিপিতে (মেমো অব এভিডেন্স) সই না নেওয়ার বিষয়টি গভীর প্রশাসনিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জাহাঙ্গীর আরিফকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে মো. মনিরুল ইসলাম দায়িত্ব পেয়েছেন। যদিও তদন্তের নতুন ধাপ শুরু হয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।

এই ঘটনায় নিহত শাহ-জাহান মিয়ার মা আয়শা বেগমের বক্তব্য অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। তিনি জানান, তাঁর ছেলের হত্যার পর পুলিশ নিজেদের খেয়ালখুশিমতো মামলা দায়ের করেছিল। তিনি বলেন, কাদের আসামি করা হয়েছে, সেটাও তাঁকে জানানো হয়নি। চূড়ান্ত প্রতিবেদন সম্পর্কেও তিনি কিছু জানেন না। এটি বিচারপ্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতার একটি দৃষ্টান্ত।

এই ঘটনাগুলো রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক রাজনীতির একটি বড় উদাহরণ। তদন্তকারীদের স্বেচ্ছাচারী আচরণ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অযাচিত প্রভাব প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতায় আঘাত হেনেছে। এটি ভবিষ্যতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এ ঘটনা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক কাঠামোর জটিল বাস্তবতাকে উন্মোচিত করেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই ত্রিভুজ প্রেমকাহিনীর মতো ঘটনাগুলো সমাজের জন্য শিক্ষা এবং প্রশাসনিক সংস্কারের তাগিদ এনে দেয়।

About Nasimul Islam

Check Also

খেজুরের রস পান করতে এসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, গ্রেফতার ১৫

নেত্রকোনা থেকে খেজুরের রস খেতে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া আসা ১৫ যুবক ‘জয় বাংলা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়ায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *