ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হ/ত্যাকান্ডের মধ্যে দিয়ে। তাকে শেষ করে বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসকে বিকৃতি করেছে একটি দেশ বিরোধী মহল। কিন্তু তাকে ও তার পরিবার নৃ/শংস ভাবে হ/ত্যা করা হলেও ঐ সময় এত কাছের মানুষ থাকা স্বত্বেও কেউ কোন প্রতিবাদ করেনি। এমনি ঘটনার জেনেও চুপ করে থেকেছে বাঁচানোর সামন্যতম চেষ্টাও করেননি। বঙ্গবন্ধু হ/ত্যা জীবন সায়াহ্নে তোফায়েল আহমেদকে ব্যর্থতা স্বীকার করার অনুরোধের মন্তব্য করে যা বললেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হ/ত্যার পরে তাঁর তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদকে প্রতিবাদ না করায় নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন।
গত ১৯ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আনোয়ার হোসেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগ।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশের একজন মহান নেতা। আমি আশা করেছিলাম, ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় জীবনের সায়াহ্ণে দাঁড়িয়ে অন্তত পক্ষে একটি সত্য কথা বলে যাবেন। কিন্তু উনি বললেন না, উনি বলবেন না, বলেননি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আশা করেছিলেন তোফায়েল আহমেদ ব্যর্থতা স্বীকার করুক। বলুক আমরা বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা রাজ্জাক, তোফায়েলকে সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসত। এই হচ্ছে প্রতিদান ওদের।’
আনোয়ার বলেন, ১৪ আগস্ট গভীর রাতে খু/নিরা বঙ্গবন্ধুকে হ/ত্যা করে। ১৫ আগস্ট বিকেলে খু/নিরা বঙ্গবন্ধুকে দাফনের জন্য টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যায়। যারা আমার প্রশ্ন যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যায় কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন।যারা ১০ জন, ২০ জন, ৩০ জন মন্ত্রীর ক্ষমতা রাখত, যাদেরকে বঙ্গবন্ধু পুত্র সমতুল্য স্নেহ করত। বঙ্গবন্ধু অনেক বিশ্বাস করতেন, ভরসা করতেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দেহ পড়ে থাকল ৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়ির কোনায়।
বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ আপনি থাকতেন আওয়ামী লীগ সভাপতির আজকের কার্যালয়ের (ধানমন্ডির ৩ /এ সড়ক) পাশের দেয়ালে। আপনি (তোফায়েল) কী পারতেন না, ঢাবির ১০টি হলে বঙ্গবন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিল শিক্ষার্থীরা। ধানমন্ডির ৩ /এ বাসা থেকে আপনি যদি দৌড়েই আসতেন কত সময় লাগত? ১৫ মিনিট? ২০ মিনিট? আপনারা আসেননি। আপনারা যদি এসে বলতেন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আক্রমণ হয়েছে, তোমরা কে কোথায় আছ? ১০টা হল থেকে ১০০০ করে ছাত্র যেত তাহলে ১০ হাজার লোকের মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অভিমুখে যেত। ঢাকা কলেজের ছাত্ররা প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আপনারা আসেননি বিশ্ববিদ্যালয়ে, আপনারা পরের দিনও আসেননি, যদি একটা মিছিল হত, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হত।’
এ সময় তিনি জাতীয় নেতা প্রয়াত আবদুর রাজ্জাকের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, ‘আমার মতো মানুষেরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আপনার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইবে। আপনার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। আপনি ১৯৭৫ সালের 2শে সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আপনারা এই ১৫ দিন কোথায় ছিলেন? কি করছিলেন? আমরা যত দূর জানি ওই ফরিদপুরের খু/নি কেএম ওবায়দুর রহমানের হাতে পায়ে ধরে খু/নি জিয়ার অনুকম্পা নিয়ে সেদিন স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আমরা সবাই কম বেশি জানি। কেউ বলে, কেউ বলে না। আমি আজকে আপনাদের সামনে বলে গেলাম।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাক এখানেই থেমে থাকেননি, জেল থেকে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিল। তার সভাপতি ছিলেন সেই জাগতিক অবিশ্বস্ত মোনাফেক মোশতাকের বন্ধু আব্দুর মালেক উকিল। তিনি তথাকথিত আওয়ামী লীগের সভাপতি। ললন্ডনে যাত্রাবিরতির এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন দেশ… আপনারা জানেন না সেদিন তিনি কী বলেছিলেন? জানেন আপনারা কী বলেছিলেন লন্ডন বিমানবন্দরে? বলেছিলেন ফেরাউনের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। এটা হচ্ছে আব্দুল মালেক উকিল।’
তিনি বলেন, খু/নি জিয়ার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছে। ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগ সোজা মেরুদণ্ডে নির্বাচন করলে সেই নির্বাচনে ৩৯টি আসন পেত না। আওয়ামী লীগ ২৯০টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করত। সবই ধূর্ত ও চতুর আব্দুর রাজ্জাকের খেলা। যিনি সারাজীবন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষ/ড়যন্ত্র করেছেন। যখনই সুযোগ পেয়েছেন ষড়যন্ত্র করেছেন। এক এগারোর সময়ে এই আব্দুর রাজ্জাক শেখ হাসিনাকে মাইনাস করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল। সেই স্বপ্নসাধ কোনো দিন পূরণ হয়নি। পূরণ কোনো দিন কারও হবে না।’
এ সময় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারে এই ব্যক্তি কীভাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হলেন? আমি সত্য কথা বলেছি।এর জন্য আমার যদি রাজনীতিতে কোন ভাগ্য বিড়ম্বনা হয়, আমি মেনে নিতে রাজি আছি।
জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন দেশের একটি অন্যতম সংবাদমাধ্যকে বলেন, ‘এটা আমার নিজের বক্তব্য। আমার ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার করেছি।’
প্রসঙ্গত, সেদিনের সেই ঘটনার জন্য কোন ধরনের ভুল স্বীকার না করার বিষয়ে এমন কঠোর বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সে দিন যা ঘটেছিল সেটি বিষয়ে কখনো ভুলবে না দেশের মানুষ প্রশ্ন থেকেই যাবে।