আরিফুর রহমান দোলন হলেন ফরিদপুর জেলার একজন কৃতি সন্তান এবং সেই সাথে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবীদ। তিনি দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও আরিফুর রহমান দোলন তার এলাকার মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি তার এক বক্তব্যে সংশয় প্রকাশ করেছেন আরিফুর রহমান দোলন।
আবদুল মোমেন কি ইচ্ছা করেই সব করেছেন? কোন উদ্ভাবন? না-কি অপরিপক্ক রাজনৈতিক জ্ঞান? জাতীয়, আন্তর্জাতিকভাবে সরকার ও আওয়ামী লীগে কতটা বিতর্কে জড়ালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী? আবদুল মোমেন কি আওয়ামী লীগের সম্পদ? না-কি বোঝা?
বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতকে ‘যা প্রয়োজন তাই করতে’ অনুরোধ করেছেন। তুমি কি বুঝতে পেরেছো? সরকার টিকবে না- নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে- অন্য কোনো দেশ কি সিদ্ধান্ত নেবে? দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি এ কথা বলতে পারেন? একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক কিভাবে এ কথা বলতে পারে?
গত বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীতে জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠানে আবদুল মোমেন প্রকাশ্যে বলেন, ‘দুই দেশেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। ভারত শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করলে এটা সম্ভব; বিনা দ্বিধায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অনেকে আমাকে ভারতের দালাল বলে, কারণ অনেক ঘটনা ঘটে, আমি কোনো শক্ত বক্তব্য দেই না।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এত সহজ সরল নন যে তোতাপাখির মতো কেউ শেখা কথা! জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তার কাজের জায়গা, তিনি যাদের সাথে কাজ করেছেন তাদের পরিচয় বলে যে আবদুল মোমেন কিছু ‘জটিল’ জিনিস শিখেছেন। তাঁর জীবনী বলছে, এক সময় (১৯৭৩-৭৪) তিনি দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী কি খন্দকার মোশতাক? না-আর কি? তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জীবনবৃত্তান্তে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। তবে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর পিএসের দায়িত্ব সামলান আবদুল মোমেন এতটাই অপরিণত যে মুখ বুজে কিছু বলবেন এমনটা ভাবা কি ঠিক?
এখন সবদিক থেকে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ভারত কি সরকারকে টিকিয়ে রাখবে নাকি? বিষয়টি সরকারের জন্য নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর। এই মন্তব্য স্পষ্টভাবে উদ্দেশ্য নয়. এতে দেশের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করা জড়িত।
আমরা আমাদের ঐশ্বরিক চোখে দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য দেশের অভ্যন্তরে ‘ভারতবিরোধী শক্তির’ জন্য একটি সুস্বাদু রসদ। তিস্তার পানি চুক্তি না থাকাসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কিছু অমীমাংসিত সমস্যা রয়েছে। আবদুল মোমেনের শিশুসুলভ অযাচিত মন্তব্য পুরো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে না?
বাংলাদেশে গত দুই সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের শেষ নেই। সুযোগ পেলেই প্রধান বিরোধী দলগুলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পাশাপাশি ভারতকে টেবিলে রাখে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে, যখন নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল, বিরোধীরা এখনও ভারতের ভূমিকার দিকে আঙুল তুলেছে। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফরে আসায় বিরোধীরা এই সুযোগ পায়। কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের সঙ্গে। এর আগ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতে নারাজ জাতীয় পার্টি ইউটার্নের সঙ্গে নির্বাচনে যেতে রাজি হয়েছে। তবে এরশাদ দাবি করেছেন, ভারত তাকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছে। পরবর্তীতে আমাদের জাতীয় নির্বাচনের সময়, ভারতের শক্তিশালী অবস্থান অবশ্যই সরকারের পক্ষে ছিল। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকনা না রেখে যেভাবে তা বলেছেন, তাতে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও শিষ্টাচার সব নষ্ট হয়ে গেছে।
আবদুল মোমেনের এই বক্তব্যে ভারতও অস্বস্তিতে পড়ার কথা। সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বিতর্ক তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এখানে ভারতের ভাবমূর্তি স্পষ্টভাবে জড়িত। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত হস্তক্ষেপ করছে কি না, তা বোঝানোর দায়িত্বও তৈরি করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর। এটা কি দুই দেশের সুসম্পর্কের পথে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা নয়?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অটল সমর্থন এবং উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা অতুলনীয়। বাংলাদেশের মানুষ সবসময় কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। কিন্তু এই সমর্থন, সহযোগিতা ছিল বন্ধুত্বের নিদর্শন। যে সমর্থন কোন শর্ত সাপেক্ষে দেওয়া হয়নি. আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করে নেন। যৌথ নদীর ন্যায্য অংশের দাবিতেও বার্তা দেন। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সে (ওআইসি) যোগ দেন কোনো আপত্তি না নিয়ে।
এই সব মোমেন সাহেবের জানা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বিষয়টিকে দেশের নাগরিকরা ভালো চোখে দেখছেন না।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে আব্দুল মোমেন সম্পর্কে যা জেনেছি তা খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। তিনিই যাকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছিল (২০০৯) আওয়ামী লীগ সরকার তাকে সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাব করেছিল। মোমেনকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানোর চিঠি সৌদি আরব অনুমোদন করেনি বলে জানিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। পরে তাকে জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি করা হয়। কিন্তু সৌদি আরব যে কারণে মোমেনের ওপর অখুশি তা এখনই এগিয়ে আসা জরুরি।
আর যে দেশের এক নম্বর শ্রমশক্তি রপ্তানি হয় সেই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা কীভাবে করছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী? কেন, কোন পরিস্থিতিতে তিনি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন? আমরা কি কখনো এই বিষয়গুলো জানতে পারবো?
আবদুল মোমেন তিন বছর আগে মন্ত্রী হিসেবে ভারত সফরে এসে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো কেন বলেছিলেন, তার স্পষ্ট জবাব কি পাওয়া যাবে? কেন তিনি তাঁর বিষয়ের বাইরে গিয়ে ‘স্বর্গ’ তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন? এসব বিতর্ক কি অনিচ্ছাকৃত? তুমি কি বুঝতে পেরেছো? না-রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কি অভাব?
মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ দায় এড়াতে পারবে না? মন্ত্রীর বক্তব্য ব্যক্তিগত হলেও জ্বলন্ত রাজনৈতিক বিতর্ক কি নিভে যাবে?আবদুল মোমেন এখন সরকারে সবচেয়ে শক্তিশালী। আর একের পর এক বিতর্কে ফেলছে সরকারকে।
প্রসঙ্গত, দেশ জুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা নিয়ে চলছে তুমুল সমালোনা এবং তার কথা সৃষ্টি করেছে অনেক বাকবিতন্ডার। একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে কিভাবে তিনি এইধরণের বেফাঁস কথা বলেন সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন কেউ।