ছেলে হয়েছে নিখোঁজ একটা মায়ের বা সেই ছেলের পরিবারের কাছে এর থেকে বড় শোক আর আতংকের কিছু হতে পারে না। এরপর যদি শোনা যায় নিখোঁজ সেই ছেলেই আর নেই পৃথিবীর বুকে। তাহলে এর থেকে বড় কষ্টের কিছু হয়তো নেই একজন মায়ের কাছে। আর এমন অবস্থার মধ্যে দিয়েই দিন পার করছেন সদ্য নি’হ’ত বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মা আর তার পরিবার।
ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, আমার মেধাবী বাচ্চা ছেলেটা বুয়েটে পড়তে যাইয়ে শ্যাষ হইয়ে আসছে৷ আমরা তিল তিল করে আমাদের সন্তানরে গড়ছি৷ আমরা তিল তিল করে আমাদের বাচ্চাদের গড়ি আর আমাদের বাচ্চারা শেষ যায়৷
ফারদিনের মা আরও বলেন এইটা তো সরকার দেখলো না৷ আজ মামলা হবে, পরশুদিন বের হয়ে চলে যাবে তারা। আর এমনি চলছে দেশ।এর আগেও তো বুয়েটে একটা সন্তান হারিয়েছে, নইলে আবরার মৃত্যুর পর বুয়েটের কোনো সন্তানের গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কারো ছিল না। এত কলিজা কাদের আছে তাদের তো আপনারা খুঁজে বের করতে পারেন না৷
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ফারহানা ইয়াসমিন৷
তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর সোমবার (৭ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের নিথর দেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ।
তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন; তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ফারদিনের ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শেখ ফরহাদ সাংবাদিকদের জানান, ফারদিন নূর পরশ নি’হ’ত’ হয়েছেন।
বিকেল সাড়ে ৫টায় ‘লা’শ ব’হ’ন’কা’রী অ্যাম্বুলেন্স কব’র’স্থানে’র’ সামনে থামে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তার নিথর দেহ ক’ব’রে’ নামানো হয়।
এ সময় ফারদিন নূরের পরিবারের সদস্য ও বুয়েটের সহপাঠীরা উপস্থিত ছিলেন। দা’ফ’নে’র সময় ক’ব’র’স্থা’নে স্বজন ও সহপাঠীদের কান্নায় শোকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
ফারদিনের মা বললেন, আমার দাবি কি পূরণ করতে পারবেন আপনারা? আমার সন্তান তিনদিন যাবৎ নিখোঁজ ছিল৷ আপনারা তো খুঁজে আনতে পারেন নাই৷ আপনাদের কী বলবো, বলেন? আপনারা তো শুধু বলেই চলে যান৷
বুয়েটে আরও একটি ছেলে মারা গেল, তো আপনারা কী করতে পারছেন বলেন? আপনারা তো শুধু রিপোর্ট লিখবেন৷ আর কিচ্ছু করার নাই আপনাদের৷
কাঁদতে কাঁদতে ফারদিনের মা বললেন, আমার কলিজার টুকরো, আমার সোনামনি চলে গেছে৷এতে কারোর কিছু আসে যায় না। আমার বাবা গেছে গা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ফারদিন শুক্রবার বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে পরের দিন (শনিবার) পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরবেন বলে জানালেও শুক্রবার বেলা ১১টার পর তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় তার শেষ রামপুরা থানা এলাকায়৷
রামপুরা থানায় জিডি করার পর পুলিশ দ্রুততম সময়ে মোবাইল ট্র্যাকিং ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কাজ শুরু করলে ‘কিছু একটা পাওয়া যেত’ বলে মনে করেন ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন৷
তিনি বলেন, পুলিশ অনেক চেষ্টা করেছে। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হলে এবং শেষ পয়েন্ট এবং স্থান যেখানে তার ফোন সক্রিয় ছিল,সেখানে খোজ হলে হয়তো কিছু পাওয়া যেত।
এ দিকে এই ঘটনায় আবারো আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে। আর এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, দুইদিন আগে তার এক আত্মীয় আমাদের থানায় এসে রিপোর্ট করেছেন, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে তার লোকেশন দেখলাম তার এক বান্ধবীর বাড়ির কাছে। পরে তার নিথর দেহ পাওয়া গেল। এটা আমাদের ইনকোয়ারিতে আছে। সঠিক তথ্য পেলেই আপনাদেরকে জানাব।